লালমনিরহাটে তাপমাত্রা ক্রমাগত কমতে থাকায় শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর, রংপুর জানিয়েছে, শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় লালমনিরহাটের তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন এটি ছিল ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি জানুয়ারির ৩ তারিখে মাসের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
শীতের প্রভাবে জেলায় দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তীব্র ঠাণ্ডায় সকাল-বিকেল কুয়াশা জমে থাকায় জীবিকার জন্য কাজ করা দিনমজুর, রিকশাচালক ও ফুটপাতের দোকানদাররা আয়-রোজগার করতে পারছেন না।
অটোরিকশা চালক এরশাদ বলেন, “শীতের কারণে ভোরে বের হতে পারি না। সকাল ৯টা-১০টার দিকে কাজ শুরু করলেও শীতের কারণে রিকশা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিদিন আগে যেখানে ৬-৭শ টাকা আয় করতাম, এখন ৩-৪শ টাকাও কষ্টে হয়। এমন দিন আসে, যখন রিকশা চালানোই সম্ভব হয় না। পরিবারের চারজন সদস্য নিয়ে দিন কাটানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ফুটপাতের চায়ের দোকানদার আলম জানান, শীতের কারণে মানুষ চা খেতে আসলেও দ্রুত চলে যায়। দোকানে বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, “অন্যান্য সময় দোকানে মানুষ বসে গল্প করত, চা খেত। কিন্তু এখন দোকানে ক্রেতা নেই। বিক্রি কমে গেছে, বেশিরভাগ সময় একাই বসে থাকতে হয়।”
দোকানদার আব্দুস সবুর বলেন, “শীতের কারণে দেরি করে দোকান খুলি আর রাত ৮টার মধ্যেই বন্ধ করে দিই। মানুষের আনাগোনা কমে গেছে, তাই বেচাবিক্রি হচ্ছে না। সংসার চালাতে পুঁজি থেকে খরচ করতে হচ্ছে।”
শীত যেখানে ধনী মানুষের কাছে আরামদায়ক সময়, তারা নামিদামি রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্রে সময় কাটাচ্ছেন, সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়। কাজ না করতে পারায় তারা একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করতেও হিমশিম খাচ্ছেন।
সচেতন নাগরিক মুহতাসিম ইসলাম অমি বলেন, “বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে, তবে নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ কম। আমি বিত্তবানদের আহ্বান জানাই, তারা যেন এই বিষয়ে উদ্যোগ নেন।”
লালমনিরহাটে শীতের তীব্রতায় একদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে খাদ্য ও শীতবস্ত্রের সংকটে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি।
ভিসি/এএস
আপনার মতামত লিখুন :