আধুনিক যন্ত্রপাতির যুগেও কুড়িগ্রামের বৃদ্ধ কৃষক মমিন মিয়া (৬৫) ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের জমগ্রামের বাসিন্দা মমিন মিয়া প্রায় সাত-আট বছর ধরে ঘোড়ার হাল ব্যবহার করছেন।
একসময় গ্রামীণ জনপদে গরু-মহিষ দিয়ে হাল চাষ প্রচলিত ছিল। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই পদ্ধতি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেলেও মমিন মিয়া ঘোড়ার হাল দিয়ে চাষাবাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। গরু-মহিষের পরিবর্তে ঘোড়া ব্যবহারের কারণ হিসেবে তিনি জানান, গরুর হালের চেয়ে ঘোড়ার গতি বেশি হওয়ায় অল্প সময়ে বেশি জমি চাষ করা সম্ভব হয়।
মমিন মিয়া বলেন, “আমার নিজের কোনো জমি নেই। অন্যের জমি চাষ করে আয় করি। বিঘাপ্রতি ৫০০ টাকা পাই। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন বিঘা জমি চাষ করি। যা আয় হয়, তা দিয়ে ঘোড়ার খাবার কিনি এবং বাকি অর্থ দিয়ে আমার চার সদস্যের সংসার চলে। গরুর চেয়ে ঘোড়ার গতি বেশি, তাই ঘোড়া দিয়ে কাজ করি।”
মমিনের ঘোড়ার হালের চাহিদা স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। বাউরা এলাকার কৃষক আজিজুল বলেন, “খণ্ড জমি চাষের জন্য ট্রাক্টর আনা সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় মমিন মিয়ার ঘোড়ার হালই আমাদের ভরসা।”
বাউরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মামুন হোসেন সরকার জানান, মমিনের ঘোড়ার হাল স্থানীয় কৃষকদের কাছে খুবই চাহিদাসম্পন্ন। তার বাড়িতে চারটি ঘোড়া রয়েছে, যেগুলো পালাক্রমে হালচাষে ব্যবহার করা হয়।
পাটগ্রাম উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা হারুন মিয়া বলেন, “আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চাষাবাদ এখন সাধারণ হলেও ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ করা একটি বিরল ঘটনা। মমিন মিয়া জীবিকার প্রয়োজনে এই পদ্ধতিতে অন্যের জমি চাষ করছেন। তবে আমরা কৃষকদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি।”
মমিন মিয়ার এই শ্রম আর ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি স্থানীয়দের কাছে একটি আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠেছে, যা প্রযুক্তির যুগে হারিয়ে যাওয়া একটি গ্রামীণ সংস্কৃতির স্মারক হিসেবে দেখা যেতে পারে।
ভিসি/এএস
আপনার মতামত লিখুন :