এক দশক আগেও শীতের মৌসুম এলেই পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রতিটি গ্রামে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি ফিরনি, পায়েস, গুঁড় দিয়ে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠাসহ হরেক রকম পিঠাপুলির উৎসব দেখা যেত। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন বিলুপ্তপ্রায়। খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং গাছি পেশায় আগ্রহী মানুষের অভাবে এ ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তার দুপাশে খেজুর গাছের সারি একসময় সাধারণ দৃশ্য ছিল। কিন্তু রাস্তা সম্প্রসারণ, বিদ্যুতের খুঁটি বসানো এবং বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে এসেছে। স্থানীয়দের মতে, এ অবস্থা চলতে থাকলে খেজুর রস সংগ্রহ এবং গাছি পেশা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
ফুলখালী গ্রামের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর মোল্লা জানান, আগে তাদের অনেক খেজুর গাছ ছিল, কিন্তু রাস্তা সংস্কার ও বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর সময় অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এখন যে কয়টি গাছ আছে, সেগুলো থেকেই রস সংগ্রহ চলছে।
স্থানীয় গাছি মো. হযরত খলিফা বলেন, “আগের মতো এখন আর রস হয় না। ৩০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি, তবে মালিকপক্ষকে দিতে হয়। মাঝে মাঝে চোরেরা রস নিয়ে যায়। এজন্য রাত জেগে পাহারাও দিতে হয়।”
বয়সের কারণে তিনি এখন আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না।
বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আবুল বাশার আকন বলেন, “খেজুর গাছ শুধু গ্রামের শোভা বাড়ায় না, এটি মুখরোচক খাবার রস ও গুড়ের উৎস। আমাদের সবার উচিত রাস্তার পাশে বেশি পরিমাণ খেজুর গাছ রোপণ করা।”
রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, শীতের পিঠা ও পায়েস তৈরির জন্য খেজুরের রসের চাহিদা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রশিক্ষিত গাছির অভাব এবং রস চুরির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। একটি খেজুর গাছ থেকে বছরে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার রস বা গুড় উৎপাদন করা সম্ভব, তবে প্রয়োজন গাছি প্রশিক্ষণ এবং উৎসাহ প্রদান।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভার্ক-এর রাঙ্গাবালী উপজেলা সমন্বয়ক মো. মহসিন তালুকদার বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের আগ্রহের অভাবে আগের মতো আর খেজুর গাছ হচ্ছে না। নতুন প্রজন্ম গাছি পেশায় না আসায় এ ঐতিহ্য ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।”
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাস্তার পাশে নতুন খেজুর গাছ রোপণ এবং গাছি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের হার বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী এ পেশাকে টিকিয়ে রাখা যাবে।
ভিসি/এএস
আপনার মতামত লিখুন :