দেশের শিল্পখাত একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। ডলার সংকট, আমদানি কড়াকড়ি, উচ্চ সুদহার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেই নতুন করে গ্যাসের মূল্য ১৫২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। সরকারের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশীয় শিল্প খাতের টিকে থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে শিল্পখাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা, যা পেট্রোবাংলার প্রস্তাব অনুযায়ী বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সায় পৌঁছাতে পারে। নতুন কারখানা ও পুরাতন সংযোগে লোড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই আড়াই গুণ বেশি মূল্য প্রযোজ্য হবে। এরই মধ্যে এই প্রস্তাব পাসের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাসের দামে এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি শুধু দেশীয় উদ্যোক্তাদের নয়, নিরুৎসাহিত করবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও। তারা জানান, বিদ্যমান গ্যাস সংকটের সমাধান ছাড়াই মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে এবং বেকারত্বের হার আরও বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, “এ প্রস্তাব পাস হলে শিল্পায়ন থমকে যাবে। নতুন করে বিনিয়োগ আসবে না। বর্তমান গ্যাসের মূল্যই অনেক বেশি, তার ওপর সরবরাহ সংকট রয়েছে।”
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “উচ্চমূল্যে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না, কারণ আমদানির জন্য ডলার সংকট বিদ্যমান।” একই সঙ্গে তিনি গ্যাস সংকট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ওপর জোর দেন।
বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ জানিয়েছেন, পেট্রোবাংলার মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে। শুনানির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহ সংকটের ফলে ভারী শিল্পে ধস নামবে। এতে ঋণখেলাপি ও কর্মসংস্থান সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে। এর পাশাপাশি, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের বদলে অন্য গন্তব্যে চলে যাবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উদ্যোক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, শিল্পখাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান এবং জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার আগে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে।
ভিসি/এএস
আপনার মতামত লিখুন :