সর্বশেষ :

লোভে পাপ পাপে মৃত্যু


নুরুল আফছার
ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪ । ৫:৫২ অপরাহ্ণ
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু
প্রতীকী ছবি

শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে, যা সাধারণ মানুষের চোখ কপালে তুলেছে। বালিশকাণ্ড থেকে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি, ব্যাংক লুট থেকে শেয়ারবাজার ধস, হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থ পাচার-এসব খবর একদিকে যেমন বিস্ময় সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। উন্নয়নের কথিত জোয়ারের আড়ালে এসব লুটপাট ও দুর্নীতির মহোৎসব দেশকে অভ্যন্তরীণভাবে ঝাঁজরা করে তুলেছে।

অর্থ পাচারের ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, শ্রীলঙ্কার দেউলিয়াত্বের পর অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন-দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেউলিয়া দেশ হতে পারে বাংলাদেশ। সংবাদপত্র ও গবেষণাপত্র গুলোতেও শেখ হাসিনার সরকারের ১৫ বছরে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের তথ্য উঠে আসে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে প্রকাশিত শ্বেতপত্রে শেখ হাসিনার শাসনামলকে সরাসরি ‘চোরতন্ত্র’ বলে আখ্যায়িত করা হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার লুণ্ঠন ও পাচার হয়েছে। এই লুণ্ঠনের মূল স্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের।

সরকারি ব্যাংকগুলোর আমানতশূন্য হওয়া, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ চুরি, শেয়ারবাজারের আকস্মিক পতন, এবং পাচার হওয়া অর্থে বিদেশে নেতাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন-এসব ঘটনা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। তবুও, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি; বরং লুটপাটকারীরা সরকারের মদদ পেয়েছে। এমনকি, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় অভিযুক্ত শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন, নারী ক্ষমতায়ন, ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর মতো ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে, ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচন এবং অর্থ পাচারের তথ্য ফাঁসের পর সেই প্রশংসার আড়ালে থাকা দুর্নীতির বাস্তব চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে চলে আসে। লোভ ও ক্ষমতার দাম্ভিকতা তাকে এমন অবস্থানে নিয়ে যায়, যা দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুণ্ন করেছে।

একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারের মাধ্যমে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠার একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু সেই চেতনাকে তিনি নিজেই কলুষিত করেছেন দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার যে শান্তি পেয়েছিল, তা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে তার সরকারের দুর্নীতির কারণে।

বাংলাদেশের মানুষ এখন সেই লোভ, পাপ, এবং তার করুণ পরিণতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করছে। দেশীয় ও প্রবাসী নাগরিকরা এই দুর্নামের ভার বহন করছে। শেখ হাসিনার দুঃসাহস ও চাতুর্য দীর্ঘমেয়াদে দেশ ও জাতিকে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

বাংলার প্রাচীন প্রবাদ “লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু” বারবার প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসন এই প্রবাদকে নতুনভাবে মনে করিয়ে দিয়েছে। অন্যায়ের শাস্তি অবধারিত, আর ক্ষমতার অপব্যবহারের শেষ পরিণতি আত্মবিনাশ। বাংলাদেশের জনগণ এখন তার শাসনের করুণ পরিণতির সাক্ষী।

লেখক,

সাংবাদিক ও কলামিস্ট


ভিসি/এএস


পুরোনো সংখ্যা

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১