নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এ আদেশ দেন। দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজীর আবেদনে এই আদেশ দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগের তদন্ত চলমান থাকায় এবং অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
দুদকের তদন্তে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আইভীর ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হোসেনের মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সিএনজি ও অটোরিকশা থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এতে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবুল হোসেনের নামে নারায়ণগঞ্জে ৪-৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও, তার গাড়ি চালকের নামে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় দুটি ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়া গেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে আইভীর দুই ভাই আলী রেজী রিপন ও আহম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জে ৭ তলা বিশিষ্ট বাড়ি, ঐতিহ্যবাহী চিত্ত বিনোদন ক্লাব ভেঙে মার্কেট নির্মাণ এবং রেলওয়ের ১৮ একর জমি দখল করে শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণের অভিযোগও তদন্তাধীন রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান আলী আহম্মদ চুনকার মেয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন এবং টানা তিনবার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পর বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ তাকে কঠিন সংকটে ফেলে দিয়েছে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে আইভীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়। তদন্তের অংশ হিসেবে তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুদকের মতে, অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে আরও গভীর অনুসন্ধান প্রয়োজন এবং এর জন্য তাকে দেশে রাখা অত্যাবশ্যক।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইভী বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ভিসি/এএস
আপনার মতামত লিখুন :