স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও একটি রাস্তা ও সেতুর অভাবে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন শ্রীবরদী উপজেলার সিংগাবড়ুনা ইউনিয়নের গ্রোবিন্দপুর গ্রাম।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলা থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর প্রশ্চিমে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোল ঘেষা উন্নয়ন বঞ্চিত প্রান্তিক জনপদ গোবিন্দপুর গ্রাম। সিংগাবড়ুনা মোড় হতে গোবিন্দপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা তালিকাভুক্ত থাকলেও বুঝার উপায় নেই এটা রাস্তা, সংস্কার এর অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচল এর অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এই গ্রামের ভিতর দিয়ে পাহাড়ী নদী প্রবাহিত, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় নেই কোন সেতু, এই গ্রামের ভিতর দিয়ে পাশ্ববর্তী প্রায় ৮ গ্রামের হাজারো মানুষ এর যাতায়াত, তার পরেও কেনো এই গ্রামে রাস্তা ও ব্রীজের উন্নয়ন সাধিত হয়নি সে উত্তর আজো খুজে পাচ্ছেনা গবিন্দ্পুর গ্রামের সাধারণ জনগন। অত্যাধিক ভোগান্তিতে রয়েছেন কোমলমতী শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ বয়োজ্যেষ্ঠ ও গর্ভবতী নারীরা। সেতু ও রাস্তার অভাবে শিক্ষার্থীরা ঠিক মত স্কুলে যেতে পারে না। স্কুলে যেতে কোমলমতী শিক্ষার্থীদের একটি নদী ও দুই টি নালা পার হতে হয়, শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাটার পথ থাকলেও বর্ষা মৌসুমে ঘড় থেকেও বের হওয়া প্রায় অসম্ভব। অনেক শিক্ষার্থীর রাস্তা ও সেতুর অভাবে উচ্চশিক্ষার আশা ফিকে হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে পড়াশুনা, বেড়েছে বাল্যবিবাহের হার, এ যেনো এক অন্ধকার আচ্ছন্দ্রময় জনপদ।
গোবিন্দপুর গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন বলেন, যুদ্ধের পর থেকে শত চেষ্টা করেও একটি রাস্তা ও ব্রীজের দাবী জানিয়ে আসলেও আজ প্রযন্ত মেলেনি কোন প্রতিকার। রাস্তা ও ব্রীজের জন্য ছেলে মেয়েদের বেশী দূর লেখাপড়া করাইতে পারি নাই, কেমনে লেখাপড়া করবো ব্রীজ তো নাই সাতার কেটে পার হয়ে স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি ছেলে মেয়েদের। আমি কৃষি কাজ করে সংসার চালাই, রাস্তার অভাবে বর্ষা মৌসমে ধান,পাট বিক্রি করতে পারি না। মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলেও নদী পার হয়ে যেতে হয়, সামনে শীতকাল খুব কষ্ট করে আমাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে, আমাদের একটায় দাবী একটা রাস্তা ও ব্রীজ চাই।
গোবিন্দ্পুরের স্থানীয় বাসিন্দা মনু মিয়া বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ, সড়ক ও সেতুর অভাবে নিদারুণ কস্ট করছি, ব্রীজ ছাড়া এই নদী পারা পার হওয়া আমাদের জন্য খুব ঝুকিপূর্ণ, কিন্তু জিবনের তাগিদে ঝুকি নিয়ে আমাদের নদী পারাপার হতে হচ্ছে, অনেক নেতা কর্মী ব্রীজ ও রাস্তার আশ্বাস দিলেও আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি, আমি কি মৃত্যুর আগে রাস্তা ব্রীজ দেখে যেতে পারবো।
সিংগাবড়ুনা গ্রামের বিপ্লব মিয়া বলেন, রাস্তা ও সেতুর ভোগান্তি শুধু গোবিন্দপুর গ্রামের বাসীদের নয়, আশে পাশের প্রাশ্ববর্তী ইউনিয়নের ৭ গ্রামের মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করে যাতায়াত করেন, এই গোবিন্দ্রপুর গ্রাম দিয়ে, ভায়াডাংগা, হাসধরা, চিংগুততার, বাঘহাতা, বড়ুকুচি, সিংগাবড়ুনা, মাটিফাটা, কতুবপুর লোকজন বেশী চলাচল করেন। এই গ্রামের রাস্তা ও সেতু নির্মিত হলে আশে পাশে অঞ্চলের লোক জনের প্রায় ১০ কিঃ মিঃ রাস্তার দূরত্ব ও সময় দুইটায় কমে যাবে। তিনি দ্রুত রাস্তা সংস্কার ও সেতু দাবি করেন।
সিংগাবড়ুনার খলিলুর রহমান বলেন, গবিন্দপুর গ্রামে রাস্তা ও সেতু নির্মিত হলে, এই এলাকা সাধারণ জনগন সহ ইউনিয়নের সকল জনগন সুবিধাভোগ করবে, কারণ আমরা কৃষি কাজ করি ধান, পাট, গম, আলু, বিক্রির মৌসুমে এই রাস্তা ব্যবহার করে আমাদের কৃষি পন্য হাট-বাজারে নিয়ে যেতে হয়। এই রাস্তা নির্মিত হলে সকল ইউনিয়নবাসী উপকৃত হবে।
সিংগাবড়ুনা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার নুরআলম জানান, এই এলাকার সাধারণ জনগন চরম দূর্ভোগে বসবাস করছে, শিক্ষা ব্যবস্থা একবারে ভেংগে পড়েছে, গর্ভবতী নারীরা ও সাধারণ জনগনের তাৎক্ষণিক উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে রাস্তা ও সেতুর অভাবে মিলছে না চিকিৎসা। তিনি আরো জানান পরিষদ থেকে উন্নয়নের জন্য যে টাকা বাজেট হয় তা দিয়ে এই সমস্যা উত্তরন করা সম্ভব না, এই সমস্যা পতিকার এর জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, শ্রীবরদী উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করি কোন এলাকা যাতে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত না হয়। গবিন্দপুর এলাকায় রাস্তা ও সেতুর প্রয়োজন, আমাদের কাছে উপর মহল থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমতি আসলে, আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবো।
ভিসি/এএস
আপনার মতামত লিখুন :