সর্বশেষ :

আমার স্মৃতিতে জিয়া….


আব্দুল্লাহ আল নোমান
নভেম্বর ৭, ২০২৪ । ৮:২৮ অপরাহ্ণ
আমার স্মৃতিতে জিয়া….
সংগৃহীত ছবি

আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, দিন তারিখ মনে রাখার বোধ তখনো হয়নি। তাই আজকের লেখায়, দিন তারিখ উল্লেখ করতে পারছি না। তবে যতোটুকু মনে পরে, তখন প্রাথমিক স্তরে ছিলাম। আমার পরিচিত ফুফার কাছ থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। তখন তিনি আমাকে স্বাভাবিকভাবে না বলে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান। আমার কৌতূহলটা আরো বেড়ে যায়। আমি তখন তাকে বলি কেন বলছেন না আপনি..? একটু পর তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আমরা হয়তো আজকে অনেক উন্নত একটি রাষ্ট্রে পরিণত হতাম  পৃথিবী আমাদের অনুসরণ করতো। কিন্তু জিয়া সরকার মরে যাওয়ার পর সেই স্বপ্ন আর দেখি না। আমাদের দেশ হয়তো আর কখনোই জিয়ার মত কাউকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে পাবে না।

এরপর তিনি বলেন, আাচ্ছা! তোমাকে  ছোট্টবেলার একটা গল্প বলি।  আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। তোমাদের মত এত ছোট বয়সে আমরা প্রাইমারি শেষ করতে পারিনি। আমরা একটু বড় ছিলাম, কিন্তু ক্লাস ফোরেই পড়তাম। তখন সবেমাত্র বাংলাদেশে কিছু কিছু অঞ্চলে ব্রি ধানের চাষ শুরু হয়েছে। আমরা রাস্তার পাশে একটি জমিতে ধানের চারা রোপন করতে ছিলাম। এমন সময় আমাদের পাশের রাস্তা দিয়ে একটি ছোট্ট জিপ গাড়ি এসে আমাদের দেখে দাঁড়িয়ে যায়। গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন দুই-তিন জন মানুষ। একজন জিজ্ঞেস করেন তোমরা কী করো এখানে..?

আমরা সবাই বলি, স্যার দেখতেই পাচ্ছেন! ধানের চারা রোপণ করছি‌। উনি আমাদের পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। কেউ বললো, ক্লাস ফাইভে আর কেউ বললো ক্লাস ফোরে। তিনি বললেন, তোমরা ভালো করে পড়াশোনা করবে। তারপর আমাদের সাথে অনেক কথা বললেন। একটু পর বলে উঠেন, আমি তোমাদের সাথে ধানের চারা রোপণ করতে চাই। আমরা সবাই বলে উঠি, স্যার আপনার জামা কাপড় নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা আমাদের উপেক্ষা করে কাদামাটিতে ধানের চারা রোপণ করতে নেমে পড়লেন। কাছে ঘড়ি না থাকায় সময় বলা অসম্ভব, তবে আমার ধারণা প্রায় দেড়-দুই ঘন্টা আমাদের সাথে চারা রোপণ করেন। আমাদের ভিতর কেউ তাকে তখনো চিনতে পারিনি।

তিনি বললেন তোমরা কি জানো, বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান কে ? আমরা বলে উঠলাম জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, তোমরা কি তাকে চিনো…? আমাদের সহজ উত্তর, না। আমরা কখনো তাকে দেখি নাই। এরপর তিনি বলেন, আমি জিয়াউর রহমান। ঐসময় আমাদের কি পরিস্থিতি হয়েছিল, তোমাকে বুঝাতে পারবো না। এটা কি সত্যিই বাস্তব ছিল নাকি কাল্পনিক আজো ভেবে অবাক হই। কোন প্রোটোকল নেই, নেই কোনো গাড়ির লম্বা বহর, খুবই সাধারণ একটি গাড়ি থেকে সাধারণ একজন মানুষ নেমে কি অসাধারণ কাজ করলেন। তারপর তিনি আমাদের সবাইকে কাছে ডাকলেন, মাথায় হাত বুলিয়ে কাছে টেনে নিলেন। তখনকার সময়ে তিনি ৫০০ টাকা আমাদের দিয়ে বললেন তোমরা এই টাকা দিয়ে কৃষির উন্নয়ন করো। আমাদের কৃষি ভালো থাকলে, আমরা ভালো থাকবো। আমরা ভালো থাকলে,  আমাদের দেশ ভালো থাকবে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মানুষ হয়তো আইকোনিক রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের সময় স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ ভোগ করতে পেরেছিল। বাংলাদেশে এমন একজন রাষ্ট্রনায়কের দৃষ্টান্ত শুধু মাত্র তিনিই। আমার স্মৃতিতে আজো ছোট বেলায় শোনা সেই গল্পটি মনে পড়ে।

লেখক:

আব্দুল্লাহ আল নোমান
আরবী ভাষা ও সাহিত্য 
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

ভিসি/এএস


পুরোনো সংখ্যা

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০