প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় হ্যালোইন উৎসব, যা অনেকেই ভূতদের দিন হিসেবে জানেন। এই দিনে পশ্চিমা বিশ্বে বিশেষ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন হয় ভুতুড়ে ঐতিহ্যের এই দিনটি। মৃত আত্মাদের স্মরণে এবং ভৌতিক কাহিনীগুলোকে উৎসবমুখী করে তোলার জন্য বিশেষ পোশাক পরা, মুখোশ ধারণ এবং বিভিন্ন ভৌতিক সাজে নিজেকে উপস্থাপন করা হয়।
হ্যালোইন উৎসবের শুরু আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগে। মূলত কেল্টিক জাতির বিশ্বাস ছিল যে ৩১ অক্টোবর রাতে জীবিত ও মৃতদের পৃথিবীর সীমা অস্পষ্ট হয়ে যায়, যা প্রেতাত্মা ও অশুভ আত্মার উপস্থিতির সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং উত্তর ফ্রান্সে এই বিশ্বাস থেকেই ৩১ অক্টোবর ‘সাহ-উইন’ নামে এক বিশেষ উৎসব পালন করত কেল্টরা। তারা মুখোশ পরে আগুনের চারপাশে জড়ো হয়ে প্রার্থনা করত যাতে প্রেতাত্মারা তাদের ক্ষতি করতে না পারে।
১৭৪৫ সালের দিকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মাধ্যমে হ্যালোইনের নতুন পরিচিতি ঘটে। স্কটিশ শব্দ ‘অল হ্যালোজ’ ইভ থেকে হ্যালোইনের উৎপত্তি, যার অর্থ ‘পবিত্র সন্ধ্যা’। মধ্যযুগের পর থেকে এ উৎসব জনপ্রিয়তা পেতে থাকে এবং খ্রিস্টান ধর্মেও এর প্রভাব পড়ে। ১ নভেম্বরকে অল সেইন্টস ডে হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং তার আগের সন্ধ্যা, ৩১ অক্টোবর, পরিচিত হয় হ্যালোইন নামে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন হ্যালোইন উদযাপন করা হয়, তবে আমেরিকায় দিনটি বিশেষ গুরুত্ব পায়। উনিশ শতকের শেষে ও বিশ শতকের শুরুতে আমেরিকায় হ্যালোইন একটি আনুষ্ঠানিক উৎসবে পরিণত হয়। শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই এই উৎসবের অংশগ্রহণকারী, এবং বাড়িঘর সাজানো, কুমড়োর লণ্ঠন তৈরি, আর পোশাকধারী শিশুদের জন্য চকলেট-পেস্ট্রির ব্যবস্থায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হ্যালোইন একটি বড় বাণিজ্যিক উৎসবও বটে, যার আয়তনে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি হয়। এই দিনটিকে ঘিরে পুরো অক্টোবর মাসজুড়েই চলে সাজসজ্জা ও উৎসবের আয়োজন, যা প্রাচীন ভৌতিক ঐতিহ্য এবং আধুনিক বাণিজ্যের মেলবন্ধন ঘটায়।
ভিসি/এএস
আপনার মতামত লিখুন :