প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে ছাতিম গাছ এক চিরসবুজ রত্ন। হেমন্তের স্নিগ্ধ পরিবেশে সন্ধ্যা হলে বাতাসে ভেসে আসে ছাতিম ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। এই গাছের ঝাঁকড়া পত্রপল্লব এবং সাদা ফুল প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপস্থাপন করে। গোধূলি লগ্নে সূর্য অস্ত গেলে, বাতাসে ছাতিমের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে, যা প্রকৃতিকে মাদকতায় ভরপুর করে।
ছাতিম গাছের পাতা দেখতে দৃষ্টিনন্দন। প্রতিটি ডালের আগায় ছয় থেকে সাতটি পাতা একটি অপূর্ব বিন্যাস তৈরি করে, যার জন্য এটিকে ‘সপ্তপর্ণী’ও বলা হয়। হেমন্তের সময়, যখন প্রকৃতিতে ফুলের অভাব দেখা যায়, তখনই ছাতিম ফুল ফুটে ওঠে এবং রাতভর এর গন্ধ ছড়িয়ে দেয়। কথাসাহিত্যিক বিপ্রদাশ বড়ুয়া বলেছেন, “ছাতিম গাছ হেমন্ত ও শীতের শূন্যতায় প্রাণের প্রতীক।”
বিশ্বব্যাপী ৪০-৬০টি প্রজাতির ছাতিম গাছের জন্মস্থান পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, যেমন ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড। এক সময় শহর ও গ্রামে ছাতিম গাছ ছিল অপরিহার্য, কিন্তু বর্তমানে এর সংখ্যা বিপন্ন। সন্ধ্যার পরে হঠাৎ করে বুনো সৌরভের ঝাপটায় বুঝতে হয়, এই গাছের অস্তিত্ব এখনও রয়েছে।
ছাতিম গাছের কাঠের তেমন বাণিজ্যিক মূল্য না থাকলেও, এর গুণগত মানের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে ‘হোয়াইট চিজ উড’ নামে পরিচিত। গাছটি ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এর পাতা যৌগিক, সাধারণত সাতটি পত্রক নিয়ে গঠিত।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছাতিম গাছের নানা উপকথা ও কিংবদন্তি রয়েছে। অনেকের বিশ্বাস, এই গাছের সঙ্গে শয়তানের সম্পর্ক রয়েছে, তাই একে ইংরেজিতে ‘ডেভিলস ট্রি’ বলা হয়। বর্তমান যুগে গ্রামাঞ্চলে ছাতিম গাছের অস্তিত্ব কমে গেছে এবং এটি এখন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে।
কিন্তু, এটি আমাদের জীব-বৈচিত্র্যের জন্য অপরিহার্য। উদ্ভিদটির কষ ও বাকল প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয় এবং বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসেবে কার্যকরী। তাই, ছাতিম গাছের রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। আমাদের বাগান এবং রাস্তার ধারে ছাতিম গাছের চারা লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত, যাতে এই গাছের সুন্দর উপস্থিতি ও সুঘ্রাণ আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
ভিসি/এসকে
আপনার মতামত লিখুন :