বাংলার মাটিতে মৌসুমি ফলের কোনও বিকল্প নেই। প্রতিটি মৌসুমের নির্দিষ্ট ফলই প্রকৃতির অন্যতম দান। শরতের এই সময়ে গ্রামীণ এলাকায় বাতাবি লেবু গাছগুলোতে ঝুলতে দেখা যায় সবুজ রঙের বড় গোলাকার ফল। বাতাবি লেবু পেকে গেলে হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করে, আর ভেতরের অংশ গোলাপি হয়। এই ফলটি খেতে টক-মিষ্টি এবং বেশ রসালো, যা অনেকের কাছেই প্রিয়। তবে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বাতাবি লেবু এখনও খুব একটা প্রচলিত নয়।
কৃষি বিজ্ঞানীরা বাতাবি লেবুর উন্নত জাত উদ্ভাবন করে এর স্বাদ ও মিষ্টতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। গ্রীষ্মকালে এই ফলের বিকল্প খুব কম। ইংরেজিতে ‘Grapefruit’ নামে পরিচিত বাতাবি লেবুর পাতলা ও মসৃণ খোসার ভেতর সাদা বা গোলাপি রঙের মাংসল অংশ থাকে, যা টক-মিষ্টি স্বাদের। এটি তাজা খাওয়া যায়, কিংবা নাস্তা বা স্ন্যাক হিসেবেও উপভোগ্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, জনপ্রিয়তার অভাবে প্রান্তিক কৃষকরা বাতাবি লেবু চাষে উৎসাহী নন। ফলপ্রেমীদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ না থাকায় এই ফলটি ধীরে ধীরে অপ্রচলিত হয়ে যাচ্ছে। তবে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ২৭২ হেক্টর জমিতে বাতাবি লেবুর চাষ হচ্ছে এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২,৭৯৩ মেট্রিক টন ফলন হয়েছে।
দুটি উন্নত জাত বারি-১ এবং বারি-২ ছাড়াও স্থানীয়ভাবে জুড়ী-বাতাবি লেবু-১ এবং জুড়ী-বাতাবি লেবু-২ জাত চাষ করা হচ্ছে। কাটিং চারায় ২ বছরের মধ্যেই ফলন আসে এবং ফলের ভেতরের অংশ লাল ও মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে।
পুষ্টিগুণের দিক থেকে বাতাবি লেবু অসাধারণ। এতে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও ফাইবার, পটাসিয়াম, লাইকোপেন এবং কোলাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সমৃদ্ধ বাতাবি লেবু ওজন কমায়, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, এমনকি প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখে।
কৃষিবিদ সামছুদ্দিন আহমেদ মনে করেন, এই ফলটির চাষ বাড়ানোর জন্য আমাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। প্রত্যেকের ঘরে যদি একটি করে বাতাবি লেবুর চারা রোপণ করা হয়, তাহলে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি বাজারের চাহিদাও মিটবে।
ভিসি/এসকে
আপনার মতামত লিখুন :