ইবাদত আল্লাহর জন্য নির্ধারিত এক মহৎ কর্ম। মানুষের উচিত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করা। ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজের আনুগত্য প্রকাশ করা যায়। তবে, যদি কেউ মানুষের প্রশংসা বা মনোযোগ পাওয়ার জন্য ইবাদত করে, তাহলে তা হয়ে যায় ‘রিয়া’, অর্থাৎ লোক দেখানো ইবাদত, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, রিয়া হলো এমন এক কাজ, যার মাধ্যমে মানুষ নিজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অথচ আল্লাহ তায়ালা রিয়াকারীদের প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন এবং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করেছেন।
রিয়া হলো এক ধরনের ভণ্ডামি ও প্রতারণা। মদিনার মুনাফিকরা ইসলামের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য এবং মুসলমানদের দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করত। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা করত না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, মুনাফিকরা নামাজে দাঁড়ালে তা হয় নিস্তেজভাবে, তারা কেবল মানুষের দেখানোর জন্য তা করে। তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে না, বরং বান্দাদের খুশি করাই তাদের উদ্দেশ্য। (সুরা নিসা: ১৪২)
রিয়ার ফলে ইবাদত নষ্ট হয়ে যায় এবং আল্লাহ তায়ালা রিয়াকারীদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। পরকালে তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। এটি এক মারাত্মক অন্তর ব্যাধি, যা মুসলমানদের এড়িয়ে চলা উচিত। এজন্য রিয়া থেকে বাঁচার কয়েকটি করণীয় রয়েছে, যেমন: অন্তর থেকে মানুষের প্রশংসার আশা দূর করতে হবে এবং ইখলাস, অর্থাৎ খাঁটি নিয়ত অর্জন করতে হবে। ইখলাসের মাধ্যমে রিয়া দূর করা সম্ভব। এছাড়া শয়তান ও নফসের প্ররোচনার বিপরীত কাজ করতে হবে এবং হক্কানী আলেম ও পীর-মুর্শিদের সান্নিধ্যে থেকে আত্মশুদ্ধির পথে অগ্রসর হতে হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, আমরা যেন আল্লাহর কাছে দোয়া করি রিয়া থেকে বাঁচার জন্য। তিনি নিজেও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন, যেন তাঁর অন্তরকে রিয়া ও মুনাফিকি থেকে মুক্ত রাখা হয়।
সুতরাং, আমাদের উচিত একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর ইবাদত করা এবং সবসময় রিয়া থেকে বাঁচার চেষ্টা করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রিয়া থেকে মুক্ত রেখে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তওফিক দান করুন।
আপনার মতামত লিখুন :