দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাট এবং অব্যবস্থাপনার কারণে ধুঁকতে থাকা দেশের অর্থনীতি আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসেই অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরে আসতে শুরু করেছে।
নতুন সরকারের তত্ত্বাবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে, ব্যাংক লুট বন্ধে গৃহীত হয়েছে কার্যকর পদক্ষেপ, এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হচ্ছে নতুন উদ্যোগ। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে দেশের অর্থনীতি করোনা মহামারির পর থেকেই চাপে পড়তে শুরু করে, যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আরও নাজুক হয়ে ওঠে। ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যায় ১২০ টাকার ওপরে, এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। সেই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পরই অর্থনীতির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদকে অর্থ উপদেষ্টা এবং ড. আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের নেতৃত্বে অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করে।
প্রবাসী শ্রমিকরা নতুন সরকারের প্রতি আস্থা রেখে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছেন। এক মাসেই রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের মাধ্যমে অনেক ব্যাংক এখন স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সরকার শিগগিরই একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করবে।
দুর্নীতি দমনে আগের চেয়ে বহুগুণ সক্রিয় হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পুরাতন শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি এবং ব্যাংক লুটপাটের সাথে জড়িত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো দেশের অর্থনীতিকে পুনর্গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
এছাড়া অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা জানতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা ৮০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেবে। এ প্রতিবেদন থেকেই তৈরি হবে দেশের নতুন অর্থনীতির ভিত্তি।
ভিসি/এএস
আপনার মতামত লিখুন :