সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বয়স নাকি যোগ্যতা-এই প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, যা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন চলছে। বেশিরভাগ চাকরির ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বয়সসীমা নির্ধারিত থাকে, বিশেষ করে বিসিএস এবং অন্যান্য সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে ৩০ বছর পর্যন্ত বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন এই দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক অবস্থা এবং কর্মক্ষমতার বিবেচনায় এই বয়সসীমা বৃদ্ধি করার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। তাই প্রশ্ন থেকে যায়, এই বয়সসীমা কি প্রকৃত যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় কোনো সীমাবদ্ধতা তৈরি করে?
প্রথমেই বলা যায়, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বয়সসীমা প্রার্থীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বয়স বেশি হলেও প্রার্থীর দক্ষতা এবং যোগ্যতা অনেক বেশি হতে পারে। বয়সসীমা নির্ধারণের উদ্দেশ্য হলো, তরুণদের দ্রুত চাকরিতে প্রবেশ করার সুযোগ দেওয়া, যাতে তারা দীর্ঘ সময় ধরে চাকরিতে অবদান রাখতে পারেন। তবে অনেকেই যুক্তি দেন, যোগ্যতা থাকলে বয়স কোনো বড় ফ্যাক্টর হওয়া উচিত নয়। যার প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় সরকারি চাকরির বর্তমান নীতিমালা থেকেই। মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, উপজাতি কোটায় ৩২ বছর এবং নার্সিং পেশার ক্ষেত্রে ৩৬ বছর বয়সসীমার নীতি রয়েছে। কেন এই বয়সসীমা করা হয়েছে? এই অসামঞ্জস্য প্রমাণ করে যে, বয়সসীমা বাড়ানো সম্ভব এবং এতে চাকরির ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ফলাফল আসতে পারে।
আবার যোগ্যতা বলতে শুধুমাত্র শিক্ষাগত সনদ নয়, বরং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানও বোঝায়। যদিও বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু যোগ্যতা যদি বিবেচনায় আনা না হয়, তাহলে দক্ষ এবং প্রতিভাবান প্রার্থীরা পিছিয়ে পড়তে পারেন। এটি কেবল চাকরিপ্রার্থীদের জন্যই নয়, বরং দেশের অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ যোগ্য প্রার্থী ছাড়া দেশের প্রশাসন কাঠামোও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
তবে বয়সের সীমা কমিয়ে আনলে প্রার্থীদের একটি নির্দিষ্ট বয়সে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি শুরু করতে হয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই যোগ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তরুণ প্রার্থীরা পড়াশোনা শেষ করার পর অভিজ্ঞতা অর্জন বা অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর সময় পাচ্ছেন না, কারণ তারা সরকারি চাকরির আবেদনের জন্য নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছেন।
অন্যদিকে, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা এবং সামাজিক পরিস্থিতির কারণে অনেক শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করতে পারছে না। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেশনজটও তাঁদের শিক্ষাজীবনকে বিলম্বিত করে এবং বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। যার ফলে ৩০ বছরের মধ্যে চাকরির জন্য আবেদন করতে না পারা অনেক যোগ্য প্রার্থীর কাছে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এতে উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বের হারও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে, দেশে বর্তমানে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ১৪ লাখেরও বেশি। গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে, দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশই বেকারত্বের শিকার। যা চাকরির বয়সসীমার কারণে সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর তথ্যমতে, শিক্ষিতদের মধ্যে ৩৩ শতাংশের বেশি বেকার রয়েছে, যা একটি গুরুতর সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
বিশেষ করে, এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বেকারত্বের হার উদ্বেগজনক। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম শ্রেণি প্রাপ্তদের মধ্যে ৩৪.৪ শতাংশ এবং স্নাতক পর্যায়ে প্রায় ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার। শিক্ষাক্ষেত্রে মেধার এই বিপুল অংশের কর্মসংস্থান না হওয়া দেশের উন্নয়নের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, যারা সপ্তাহে ন্যূনতম এক ঘণ্টার কাজও পায় না, তাদের বেকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেকার মানুষের সংখ্যা ২৭ লাখ। একটি উন্নয়নশীল দেশে এমন বিপুল জনসংখ্যার বেকার থাকা দেশের ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
আবার তরুণ প্রার্থীদের চাকরির সংকটের আরেকটি বড় কারণ দক্ষতার অভাব। ২০১৯ সালে ব্র্যাক, বিআইজিডি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের তরুণরা চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতায় পিছিয়ে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করলেও তারা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না, যা চাকরির সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী তরুণদের দক্ষ করে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করাও জরুরি।
যুবক শ্রেণি জাতির মূল্যবান সম্পদ হলেও, এদের একটি বড় অংশ কর্মসংস্থানের বাইরে রয়েছে। সরকার বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুবকদের জন্য দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন এবং এই সমস্যার সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করছেন। তবে, শিক্ষিত বেকারত্ব মোকাবিলা এবং জনশক্তির কার্যকর ব্যবহারের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ জরুরি।
১৯৯১ সালে সর্বশেষ এই বয়সসীমা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছরে নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে, বাংলাদেশে সরকারি চাকুরির বয়সসীমা তুলনামূলক কম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সাধারণত ৩৫ থেকে ৪৫ বছর। এতে সেসব দেশের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যারিয়ারের জন্য প্রস্তুতির পর্যাপ্ত সময় পান। তারা মনে করেন, বয়স নয়, যোগ্যতাই নিয়োগের প্রধান মানদণ্ড হওয়া উচিত। ইতালি ও ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫ বছর, ভারত ও ফ্রান্সে ৪০ বছর এবং শ্রীলঙ্কায় ৪৫ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকুরিতে প্রবেশ করা যায়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ায়ও অবসরের আগের দিন পর্যন্ত সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশেও যদি এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তবে তরুণ প্রার্থীরা আরও সময় পেয়ে কর্মদক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতায় অবদান রাখতে পারবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে ২০১১ সালে অবসর গ্রহণের বয়স ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ করা হয়। তখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭০ বছর। বর্তমান গড় আয়ু ৭৩ থেকে ৭৪ বছরের কাছাকাছি হয়েছে, যা ১৯৯০-এর দশকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গড় আয়ু বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে কর্মক্ষম সময়েরও বৃদ্ধি হয়েছে, যা চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি এবং এই যুক্তিতে চাকরির অবসরের বয়সও নতুন করে বাড়াতে চান অনেকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সরকারি চাকরিতে ৫ লাখ ৪ হাজারের বেশি শূন্য পদ রয়েছে, যা চার বছরে ৬০ শতাংশ বেড়েছে। যদি নিয়মিত নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করা হয়, তবে এই শূন্য পদ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
তরুণ প্রার্থীদের জন্য বর্তমান বয়সসীমা যথেষ্ট, কারণ তারা ২২-২৩ বছর বয়স থেকেই শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং ৩০ বছর পর্যন্ত ছয়-সাতবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান। তাই আপাতত বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০২৩ সালের বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রতিবেদনে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বিসিএস পরীক্ষাগুলোতে কম বয়সী প্রার্থীরাই বেশি সফল। ৪১তম বিসিএসে চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ প্রার্থীর বয়স ২৩ থেকে ২৫ বছর এবং ৪৩তম বিসিএসে এই হার ৩৮ শতাংশ। অপরদিকে, বয়স বেশি হলে পরীক্ষায় সফলতার হার অনেকটাই কমে যায়। ২৭ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৪১তম বিসিএসে ১৩ শতাংশ এবং ৪৩তম বিসিএসে ১৬ শতাংশ প্রার্থীই সফল হয়েছেন, যেখানে ২৯ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১-২ শতাংশ।
অন্যদিকে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ দীর্ঘদিন ধরে পদ্ধতিগত দিক নিয়েও আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করেন, মুখস্থনির্ভর প্রশ্নপদ্ধতি তরুণদের দক্ষতার পরিবর্তে তথ্য মুখস্থ করার দিকে ধাবিত করছে। তাই পরীক্ষার প্রশ্নপদ্ধতি পরিবর্তনের জন্যও নীতিনির্ধারকদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তাই পিএসসিকেও নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
সুতরাং অন্য ভাবেও পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, বিসিএস পরীক্ষা নিয়মিত আয়োজন এবং নিয়োগের সংখ্যা বৃদ্ধি করা করা হোক। এতে ৩০ বছরের মধ্যে প্রার্থীরা ৫-৭ বার পরীক্ষার সুযোগ পাবেন এবং যাঁরা সরকারি চাকরিতে সফল হবেন না, তাঁরা অন্যান্য কর্মসংস্থানের দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন। চাকরির বয়সসীমা ৩০ বছর ধরে রাখার মানে, চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমাও ৩০ বছর থাকবে না, কারণ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে চাকরিতে প্রবেশ করতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়।
এখনকার ছাত্র-জনতা যারা দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মুখ্য অংশীদার, তাদের দাবির প্রতি সরকারকেও ইতিবাচক মনোভাব দেখানো উচিত। আর্থ-সামাজিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এনে, সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায় না। সরকারি চাকুরির বয়সসীমা ৩০ বছর রাখার ফলে অনেক যোগ্য প্রার্থী চাকুরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই কারণে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বছর করা একটি সময়োপযোগী দাবি বলে মনে করছেন অনেকেই।
বাংলাদেশ বর্তমানে একটি অর্থনৈতিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে তরুণদের সঠিকভাবে কাজে লাগানো গুরুত্বপূর্ণ। বয়সসীমা বৃদ্ধির ফলে তরুণদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা সম্ভব হতে পারে।
বয়সসীমা বৃদ্ধির ফলে দেশের বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, যা বেকারত্বের হার কমাতে সহায়ক হবে। অপরদিকে, বেকারত্বের ফলে সৃষ্ট সামাজিক অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। একজন বেকার যুবক কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে মানসিক চাপ থেকে মাদকাসক্তি বা অপরাধে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে বয়সসীমা বাড়ানোর বিরোধিতাও আছে। অনেকের মতে, বয়সসীমা বাড়ানো হলে প্রতিযোগীদের সংখ্যা আরও বাড়বে, যা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলতে পারে। প্রার্থী সংখ্যা বেড়ে গেলে পরীক্ষার সময়সীমা দীর্ঘায়িত হবে এবং ফলাফল ঘোষণায়ও বিলম্ব ঘটবে। এছাড়া, তরুণ প্রার্থীরা প্রবেশের সুযোগ কম পেতে পারে, যা কর্মক্ষেত্রে নতুনত্বের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আবার, বয়স বাড়লে অনেক ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি ও কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা চাকরির কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং নতুন পদ্ধতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা বয়স্ক প্রার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যার জন্য কম বয়সী প্রার্থীরা চাকরিতে বেশি কার্যকর হতে পারে এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
সবশেষে বলা যায়, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স এবং যোগ্যতা উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে এমন একটি নীতিমালা তৈরি করা দরকার, যাতে বয়সের কারণে যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি থেকে বঞ্চিত না হন এবং তরুণ প্রার্থীরাও যথাযথ সুযোগ পান।
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বয়সসীমা নির্ধারণে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, শিক্ষাব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো বিবেচনা করা প্রয়োজন। এছাড়া, বিশেষায়িত পেশা যেমন প্রযুক্তি, গবেষণা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে বয়সসীমা শিথিল করা উচিত। তবে শারীরিক সক্ষমতা প্রয়োজন এমন ক্ষেত্রে যেমন সামরিক বাহিনী বা পুলিশ বিভাগ, বয়সসীমা কঠোর রাখার প্রয়োজন হতে পারে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও কর্মক্ষেত্রের চাহিদা বিবেচনা করে বয়সসীমা ৩৫ করা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে, যাতে সবাই সমান সুযোগ পেতে পারে এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হয়। সরকারি চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে নীতিগত পরিবর্তন আনা হলে, এটি দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে, তবে তা যেন দক্ষতা ও উদ্ভাবন ধরে রাখতে সহায়ক হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব নেওয়া নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি গুরুত্বের সাথে এখন পর্যন্ত বিবেচিত করে কোন ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাই সরকারের উচিত গুরুত্ব সহকারে বয়সসীমা বৃদ্ধি বিষয় নিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে দেশের মূল্যবান যুবশক্তি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় এবং বেকারত্বের সমস্যা লাঘব করা যায়।
লেখক,
সহকারী বার্তা সম্পাদক, দৈনিক ভোরের চেতনা
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, সম্মিলিত সাংবাদিক পরিষদ
ভিসি/এএস
আপনার মতামত লিখুন :