টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দেশের ৯ জেলার মানুষ সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে। যদিও বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে এবং অধিকাংশ এলাকার পানি নেমে গেছে, তবে দুর্ভোগ এখনও পিছু ছাড়ছে না। বসতভিটা হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন হাজারো মানুষ। বন্যার পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে, স্পষ্ট হচ্ছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পুনর্গঠন এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বন্যার প্রথম ধাক্কা লাগে ফেনী জেলায়, যেখানে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মোমারিজপুর গ্রামের তাহেরা বেগমের মতো অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে নতুন এক জীবনযুদ্ধে লড়ছেন। তার ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে তাহেরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন, “ঘরে একটু চাল নাই, চাল যে পাকাবো ওই হাড়ি চুলা কিছুই নাই।”
নোয়াখালী জেলায় এখনও পাঁচটি উপজেলা জলমগ্ন। আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ঘরহারা মানুষগুলো। ফসল ও গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতির চিহ্নগুলো আরও স্পষ্ট হচ্ছে, কিন্তু পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত।
কুমিল্লা জেলায় এখনও পানিবন্দি রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তরা পুনর্বাসন সহায়তার অপেক্ষায় আছেন, কিন্তু বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ব্যবস্থা তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জেলার অনেক সড়ক এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেখানে যানবাহন চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে গ্রামের কাঁচা সড়কগুলোতে।
কুমিল্লার স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর রহমান জানান, “রাস্তাঘাট একদমই ব্যবহার উপযোগী নাই। তার মধ্যে সন্ধ্যা হলেই রাস্তায় চলতেও ভয় হয়।” তিনি দ্রুত সড়ক মেরামতের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
লক্ষ্মীপুর জেলাতেও অনেক এলাকা এখনও পানির নিচে। বহু বছরের দখলে খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বন্যার পানি সরে যেতে সময় লাগছে, ফলে দুর্ভোগ আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান বলেন, “গত ৪০ বছরে এরকম বন্যা দেখিনি। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে অনেক। পানি যখন নামতে থাকে, তখন অবকাঠামো নষ্ট হওয়া এবং রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। তবে, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। সবার আগে সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
এদিকে, চলতি মাসের শেষদিকে আরেকটি বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম এবং উত্তরাঞ্চলকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আগাম প্রস্তুতির প্রয়োজন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের বেশ কিছু নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী দিনে নতুন বিপদের আভাস দিচ্ছে। তবে কিছু অঞ্চলে পানির সমতল কমতে শুরু করেছে, যা সাময়িক স্বস্তি বয়ে আনলেও বিপদের আশঙ্কা এখনো কাটেনি।
ভিসি/এএস
আপনার মতামত লিখুন :