সর্বশেষ :

প্রবাসী মুসলিমদের মর্যাদা ও ইসলামী নির্দেশনা


অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪ । ৩:১৩ অপরাহ্ণ
প্রবাসী মুসলিমদের মর্যাদা ও ইসলামী নির্দেশনা

প্রবাসী জীবনের কঠিন বাস্তবতা: জীবিকার প্রয়োজনে অনেক মানুষ প্রবাসে পাড়ি দেন। যেখানে কষ্টের মাত্রা অনেক বেশি। প্রবাসীরা তাদের জীবনের অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে কাটান, কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রবাসজীবনের কষ্ট ও সংগ্রামের সত্যতা অনেক সময় উপলব্ধি করেন না। তারা শুধু প্রবাসীদের উপার্জন নিয়ে চিন্তা করেন, কিন্তু তাদের কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রামের মূল্যায়ন করে না।

অনেক আত্মীয়ই বিষয়টি বুঝতে চান না এবং প্রবাসীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অনুরোধ করেন, মনে করেন যেন তারা সবসময় আরামদায়ক জীবনে থাকেন এবং সহজেই টাকা উপার্জন করেন। আসলে প্রবাসী জীবন কখনোই সহজ নয়। বিদেশে গিয়ে সবাই সুখী হয় না এবং প্রবাসীদের টাকার পাহাড়ও নিশ্চিত নয়। তারা পরিবারের কল্যাণের পাশাপাশি দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে এবং হালাল উপার্জনের মাধ্যমে সওয়াব লাভ করে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘একজন মানুষের উপার্জনের কারণে সওয়াব রয়েছে’ (বুখারি : ১৪২৫)। ইসলামে প্রবাসীদের এ সংগ্রামী জীবনকে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

প্রবাসীদের মর্যাদা: দেশের ভেতরে আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারি, আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করতে পারি, এবং অসুস্থ হলে একে অপরকে সাহায্য করতে পারি। কিন্তু প্রবাসজীবনে ঈদ কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানও আনন্দের হয় না। মায়ের স্নেহ, স্ত্রীর ভালোবাসা ও সন্তানের সঙ্গ থেকে তারা অনেকটাই বঞ্চিত।

তবুও প্রবাসীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্টসহিষ্ণু হয়ে উপার্জন করে পরিবারকে ভালো রাখতে চেষ্টা করে। ইসলামে তাদের এ সংগ্রামী জীবনকে অত্যন্ত মূল্যবান মনে করা হয়েছে এবং তাদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যার উপার্জন পরিবারের জন্য ব্যয় হয়, তা সদকার মতো।’ (বুখারি : ৪০০৬)

নারীদের প্রবাসজীবন: ইসলাম নারীদের জীবিকার দায়িত্ব পুরুষের ওপর দেয়, তবে প্রয়োজন হলে শর্তসাপেক্ষে নারীর কাজ করার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু মাহরাম ছাড়া বিদেশে যাওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। অর্থের চেয়ে নারীর সতিত্ব ও ঈমানের গুরুত্ব বেশি। পরিবারের কল্যাণে সব কিছু উপেক্ষা করে নারী যদি বিদেশে যান, তবে তাকে শর্ত মেনে চলতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে নারী আল্লাহ এবং আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তার জন্য মাহরাম ছাড়া এক দিন ও এক রাতের পথ সফর করা জায়েজ নয়’ (বুখারি : ১০৮৮)।

যুবকদের প্রবাসজীবন: যুবকদের জন্য প্রবাসজীবন একটি কঠিন পরীক্ষা। তাদের যৌবন ও চরিত্র হেফাজত করা বড় চ্যালেঞ্জ। তারা দেশে আসতে পারে না এবং বিয়েও করতে পারে না। একদিকে পরিবারের দায়িত্ব, অন্যদিকে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠার চিন্তা—এই দুটি চাপ তাদের উপর থাকে। অনেক সময় প্রবাসীরা কয়েক বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশে এসে বিয়ে করেন এবং আবার বিদেশে চলে যান।

এতে স্ত্রীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ইসলামি চিন্তাবিদগণ চার মাসের অধিক সময় স্ত্রী থেকে দূরে থাকা সমীচীন মনে করেন না। বিবাহিত প্রবাসীদের এই কষ্ট শুধু তারা নিজে বুঝতে পারেন, যারা এর মধ্যে আছেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সফর আজাবের অংশ, যা পানাহার ও নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটায়’ (বুখারি : ১৮০৪)।

প্রবাসীদের করণীয়: প্রবাসীরা তাদের জীবনকে আরও সুন্দর ও উপকারী করতে কিছু বিষয় মেনে চলতে পারেন। অবসর সময়ে কুরআন তেলাওয়াত ও সত্যপন্থি আলেমদের বয়ান শোনা উপকারী হতে পারে। মানসিক শান্তি বজায় রাখতে হালাল বিনোদনের ব্যবস্থা নিতে পারেন।

পরিপূর্ণ ইসলাম পালন করার চেষ্টা করা উচিত। যথাসময়ে দেশে ফিরে আসা এবং দেশের উন্নত কর্মসংস্থানের চেষ্টা করা উত্তম। প্রবাসী জীবন থেকে সকল প্রকার ফেতনা থেকে দূরে থাকা চেষ্টা করুন। আল্লাহর সাহায্য ও দোয়া, প্রবাসে ভালো থাকুন। প্রবাসীরা দেশ ও পরিবারের জন্য সত্যিকারের নিবেদিত প্রাণ।

পুরোনো সংখ্যা

শনি রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০