কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় গঠিত দুটি তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এখনও আলোর মুখ দেখেনি। ঘটনার ১৭ দিন পার হলেও পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের ছুটিতে থাকার কারণে রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। এতে করে আবু সাঈদের নিহত হওয়ার প্রকৃত কারণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হয়েছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা প্রাণঘাতী কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেনি। এজন্য ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া কোনো মন্তব্য করতে তারা নারাজ।
ঘটনার দিন, ১৬ জুলাই, কোটা আন্দোলনের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত করেন। বর্তমানে তিনি ছুটিতে আছেন, ফলে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান জানিয়েছেন, সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাঈদের সহপাঠী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন, যা ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না পাওয়ার কারণে প্রতিবেদন জমা দিতে আরও সময় লাগবে।
পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সায়েফুজ্জামান ফারুকী বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নিখুঁতভাবে তদন্ত করতে সময় লাগছে। সাত কর্মদিবস শেষ হলেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় আরও সাত কর্মদিবস সময় বাড়ানো হয়েছে।
আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় প্রথম মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিভূতিভূষণ রায়। এজাহারে গুলিতে সাঈদ মারা গেছেন এমন কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইটপাটকেলের আঘাতে কিংবা অন্য কোনো কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানিয়েছেন, আবু সাঈদের শরীরে শতাধিক স্থানে বুলেটের আঘাতের চিহ্ন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবিনা আক্তারও দাবি করেছেন, সাঈদকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়। তবে এটা চূড়ান্ত কিছু নয়। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে কর্তব্যে অবহেলা, অপেশাদার আচরণ ও শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজের জন্য দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :