সর্বশেষ :

মাতৃদুগ্ধ পান সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি


অনলাইন ডেস্ক
আগস্ট ১, ২০২৪ । ১২:২২ অপরাহ্ণ
মাতৃদুগ্ধ পান সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
সংগৃহীত ছবি
বিশ্বের ১৭০টিরও বেশি দেশে প্রতি বছর ১-৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হয়। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোয় উৎসাহ দিতে এবং শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে এই কর্মসূচি।
১৯৯০ সালের ইতালির ফ্লোরেন্সে ইনোসেনটি গবেষণা কেন্দ্রের ঘোষণার সম্মানে ১৯৯২ সাল থেকে বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ সারা বিশ্বে মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উৎসাহিত করতে একটি বৈশ্বিক প্রচারণার উদ্যোগ গৃহীত হয়। ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে বিভিন্ন দেশের সরকার, ইউনিসেফ,
ডব্লিউএইচওসহ অন্যান্য সংস্থা। ১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই ঘোষণাপত্র সমর্থন করে প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্টফিডিং অ্যাকশন (ডব্লিউএবিএ) নামের একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক।
জাতিসংঘের দুই সংস্থাসহ সরকারি উদ্যোগে ১-৭ আগস্ট বিশ্বের ১৭০টির বেশি দেশে পালিত হয় সপ্তাহটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাতৃদুগ্ধ পানে শিশু যেমন সুস্থ-সবল হয়ে বেড়ে ওঠে, তেমনি উপকৃত হন প্রসূতি নিজেও।

জন্মের পর শিশুর জন্য সর্বোত্তম খাবার হলো মায়ের বুকের দুধ। শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ অপরিহার্য। কারণ মায়ের বুকের দুধে রয়েছে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ ও উপাদানযুক্ত আল্লাহ প্রদত্ত এমন তৈরি খাবার, যা শিশু সহজেই হজম করতে পারে এবং সহজেই শিশুর দেহ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক নবজাতক শিশুর জন্য মায়ের বুকে দুধ সৃষ্টি করে রাখেন। শিশুকে জন্মের পর থেকেই মায়ের দুধ খাওয়ানোর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। মহান আল্লাহ মায়ের দুধকে উৎকৃষ্ট সুষম যা হালকা মিষ্টি ও উষ্ণ করে তৈরি করেছেন।
যা নবজাতক শিশুর নাজুক অবস্থার জন্য বিশেষ উপযোগী। এমনকি এক ফোঁটা পানিরও প্রয়োজন হয় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি মুসার মায়ের অন্তরে ইঙ্গিতে নির্দেশ দিলাম, তাকে দুধ পান করাও।’ (সুরা কাসাস : ৭)
নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘স্তন্যদানকারী ও গর্ভবতী মহিলা থেকে রমজানের রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে’ (আবু দাউদ)। বর্তমান সময়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান শিশুকে মাতৃদুগ্ধ
দানের ব্যাপারে যে গুরুত্বের কথা বলে, সে গুরুত্বের কথা ইসলাম আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বেই ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা বিধান ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা সুরা লোকমানের ১৪ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘আমি তো মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্ট স্বীকার করে গর্ভে ধারণ করে। অতঃপর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে।’ অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে (সুরা বাকারা : ২৩৩)।
কুরআন ও হাদিসের আলোচনা থেকে বোঝা যায়-শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর সময়সীমা হলো, জন্মের পর থেকে চন্দ্র মাসের হিসাব অনুযায়ী পূর্ণ দুই বছর। শিশুর প্রয়োজনে এ সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো যেতে পারে। আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেন, ‘তাকে গর্ভধারণ করতে ও দুধ ছাড়াতে লাগে ত্রিশ মাস।’ (সুরা আহকাফ : ১৫)
মা ও শিশুর শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসাবিজ্ঞান নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো থেকে বিরত থাকার কথাও বলা হয়েছে। তা ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের দেহপসারিণী ও পাগল মহিলার দুধ পান করানো থেকে দূরে রাখ।’ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে জানা যায় যে,
দেহপসারিণীর (ব্যভিচারী নারীর) দুধ পানে হেপাটাইটিস বি ও এইডসের মতো ভয়াবহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে শিশু। তাই ক্ষেত্রবিশেষ শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো থেকে বিরত রাখার কথাও বলা হয়েছে ইসলামে। সর্বোপরি শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করালে শিশু ও মায়ের মধ্যে এমন একটি মানসিক বন্ধন তৈরি হয়, যা চিরস্থায়ী।
মুসলিম উম্মাহর সব শিশুর মায়ের উচিত কুরআনের হুকুম অনুযায়ী তার সন্তানকে পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করানো। পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করানোর পর প্রয়োজনে অতিরিক্ত আরও ছয় মাস শিশুকে দুধ পান করানো যেতে পারে। মায়ের দুধ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ নেয়ামত। কারণ অনেক মায়ের সন্তান হওয়ার পরও শিশুকে পান করার মতো পরিমাণ দুধ হয় না।
এ ক্ষেত্রে পূর্বে থেকে মায়েদের পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। আর ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃদুগ্ধ নবজাতক শিশুর জন্মগত অধিকার। যাতে কোনো কারণে এটি খর্ব না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা ‘আজকের শিশু, আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’। অভিভাবকের দায়িত্ব হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ দানকে উন্নয়ন ও সহায়তা করা।
ভবিষ্যৎ কর্ণধার শিশুদের মানবাধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে মায়েদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। মাতৃদুগ্ধ যাতে শিশুরা নিয়মিত পায় এ জন্য মায়েদের মধ্যে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
মায়ের দুধের অনন্য ভূমিকার কথা আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞান মায়ের দুধ খাওয়ানোর ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করছে। বিষয়টি মায়েরা মন দিয়ে উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।
পরিশেষে বলতে চাই, শিশুদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের জন্য মায়ের বুকের দুধ খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এটি শিশুর জন্য মায়ের কাছে অধিকার বা প্রাপ্য রয়েছে।
মায়ের দুধ পান করা শিশুর মৃত্যুহারও একেবারে কম। আল্লাহ তায়ালা সব মাকে কুরআন ও হাদিসের বিধান অনুযায়ী শিশুদের নিজেদের বুকের দুধ পান করিয়ে আল্লাহর হুকুম পালন করার ও শিশুর যথাযথ যত্ন নেওয়ার তওফিক দান করুন।
সূত্র: স/ আলো

ভিসি/এসকে


পুরোনো সংখ্যা

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১