ভূমি দখলকারী আব্দুল্লাহ খোকন কর্তৃক দুই দশক আগে নিখোঁজ হওয়া আব্দুল জলিলের সন্ধান ও আব্দুল্লাহ খোকনের ভাই নুরুল আমিন বাবু কর্তৃক গৃহবধুকে ধর্ষন চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ১০ টায় বাটকেখালী রাজ্জাক কন্ট্রাক্টরের বাড়ির সামনে এলাকাবাসী উক্ত মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে এলাকাবাসীর পক্ষে মোঃ রবিউল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। এসময় রাখেন ধর্ষন চেষ্টার শিকার গৃহবধু শাহানারা পারভীন, গৃহবধু শাহারিয়া, মোঃ হাফেজ আলী, খোদেজা বিবি পৌর ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাকিম, নুরজাহান খাতুন প্রমুখ । এর আগে মানববন্ধনের অনুমতি চেয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে মোঃ রবিউল ইসলাম জেলা বিশেষ শাখা (ডিএসবি)’র পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্যে ভুক্তভোগী গৃহবধু শাহানারা খাতুন বলেন, গত ৪ জুলাই সকাল ৮ টার দিকে আমার স্বামী বাড়িতে না থাকার সুবাদে নুরুল আমিন বাবু আমার ঘরে ঢুকে মুখ চেপে ধরে আমাকে ধর্ষনের চেষ্টা করে। সে আমাকে মারপিট করে ও স্পর্শকাতর স্থানে গুরুতর জখম করে। আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে লম্পট বাবু পালিয়ে যায়। আমি এরকম ঘটনায় সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। আমি নুরুল আমিন বাবুর কঠোর শাস্তি চাই।
মানবন্ধনে দেওয়া বক্তব্যে বক্তারা আরো বলেন, “আব্দুল্লাহ খোকনের বড়বাজারের আড়তে মৃত: জিয়াদ আলীর পুত্র আব্দুল জলিল কাজ করতো। আব্দুল্লাহ খোকন ২০০২ ও ২০০৩ সালে সালে তার কাছ থেকে ষড়যন্ত্র ও ছলচাতুরী করে ৭ শতক জমি লিখে নেয়। তখন আব্দুল জলিলের বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। কোন নাবালকের কাছ থেকে জমি লিখে নেওয়া আইনসিদ্ধ নয়। ২০০৪ সাল থেকে আব্দুল জলিল নিখোজ রয়েছে। আব্দুল জলিল নিখোজ হওয়ার পর আব্দুল্লাহ খোকন জমি ক্রয় করেছে বলে, যা সত্য নয় । আমাদের ধারণা আব্দুল্লাহ খোকনই আব্দুল জলিলকে গুম করে বর্তমানে উক্ত জমি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে। মানববন্ধন থেকে বক্তারা ভূমি দখলকারী ও অপহারণকারী আব্দুল্লাহ কোকনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানায়।
উল্লেখ্য, গত ২০০৪ সাল থেকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাটকেখালীর মৃত: জিয়াদ আলীর পুত্র আব্দুল জলিল নিখোজ হয়। একই গ্রামের মৃত: হযরত আলীর পুত্র ও সাতক্ষীরা বড়বাজারের কাচামালের আড়ৎদার আব্দুল্লাহ খোকন তাকে অপহরণ করে গুম করেছে বলে আব্দুল জলিলের পরিবার দাবী করে আসছে। পরিবারের দাবী ২০০২ ও ২০০৩ সালের ২ টি দলিলে আব্দুল্লাহ খোকন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নাবালক আব্দুল জলিলের কাছ থেকে ৭ শতক জমি লিখে নেয়। উক্ত জমি জবর দখলের জন্য আব্দুল্লাহ খোকন ২০০৪ সালে আব্দুল জলিলকে অপহরণ করে গুম করেছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আব্দুল জলিলের পরিবার পিটিশান-৮৮০/২২ নং মামলা দায়ের করলে গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেয়। আদালতের আদেশ অমান্য করে বর্তমানে আব্দুল্লাহ খোকন গং দহাকুলা মৌজার এসএ ১০৮৯ এর ২৭০২ ও বুজরাত খং ১০০৮ এর ১১২০ দাগের উক্ত বিরোধীয় জমি দখলের উদ্দেশ্যে গত ৪ জুলাই হামলা করে দখলের পায়তারা চালায়। এ ঘটনায় গুম হওয়া আব্দুল জলিলের বোন কারিমা খাতুন বাদী হয়ে গত ৭ জুলাই আব্দুল্লাহ খোকন সহ ৪ জনকে আসামী করে আমলী ১ নং আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া আব্দুল্লাহ খোকনের জিম্মা থেকে ছেলে আব্দুল জলিলকে উদ্ধার করার জন্য গত ৭ জুলাই সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন আব্দুল জলিলের বৃদ্ধা মাতা জরিনা বেগম।
এছাড়া ভূমি দখলকারী আব্দুল্লাহ খোকনের ভাই লম্পট নূরুল আমিন বাবু কর্তৃক গত ৪ জুলাই সকাল ৮ টায় বাটকেখালী গ্রামের আব্দুল আলিমের স্ত্রী শাহানারা পারভীনকে ধর্ষন চেষ্টার ঘটনায় শাহানারা পারভীন গত ৯ জুলাই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় শাহানারা খাতুন ৪ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। মামলায় নূরুল আমিন বাবুকে একমাত্র আসামী করা হয় যার নং পিটিশন-৩২২/২৪। মানববন্ধন থেকে আব্দুল্লাহ খোকন ও তার ভাই নূরুল আমিন বাবুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান বক্তারা।
ভিসি/এএস
আপনার মতামত লিখুন :