মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মারামারি মামলায় ২ জন আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২০ মে ) দুপুরে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সৈয়দ মো: কায়সার মোশাররফ ইউসুফ এ রায় প্রদান করেন। কারাদণ্ড ও জরিমানা প্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার পূর্ব লইয়ারকুল গ্রামের মৃত করিম মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর মিয়া ও জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে জোবায়েদ মিয়া।
আদালতে রায় প্রদানের সময় রাষ্ট্র পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাইফুর রহমান ( এপিপি) ও আসামীদের পক্ষে এডভোকেট দীপক কুমার ধর উপস্থিত ছিলেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার অবস্থিত পূর্ব লইয়ারকুলে বিগত ০৬/০৪/২০১৫ খ্রিঃ তারিখ দুপুর অনুমান ২.০০ ঘটিকার সময় আসামীগণ দা,
সুলফি ইত্যাদি অস্ত্র নিয়ে এজাহারকারী ঝর্ণা বেগম-এর বাড়িতে এসে তার পিতা সাক্ষী শাহাদাত মিয়া-এর নাম ধরে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে।
তখন এজাহারকারী ঘর হতে বের হয়ে গালিগালাজের প্রতিবাদ করামাত্রই আসামী জাহাঙ্গীর মিয়া দা দিয়ে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ্য করে ছেদ মারলে উক্ত ছেদ তার কপালের উপরে মাথার বাম পাশে পড়ে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম হয়।
আসামী জোবায়েদ মিয়া সুলফি দিয়ে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে এজাহারকারীর বুক লক্ষ্য করে ঘাই মারলে প্রাণ রক্ষার্থে সরে গেলে উক্ত ঘাই তার ডান পায়ের পাতায় পড়ে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম হয়।
সাথে সাথে ২নং আসামী জোবায়েদ মিয়া সুলফি দিয়ে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্য এজাহারকারীর মাথা লক্ষ্য করে বারি মারলে উক্ত বারি বাম হাত দিয়ে প্রতিহত করলে তার বাম হাতের কব্জির উপরে পড়ে মারাত্মক কাটা জখম হয়।
এজাহারকারীর চিৎকারে তার বৃদ্ধ পিতা সাক্ষী শাহাদাত মিয়া এগিয়ে আসলে আসামী জাহাঙ্গীর মিয়া আসামী জোবায়েদ মিয়া-এর হাত হতে সুলফি নিয়ে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে সাক্ষী শাহাদাত মিয়া-এর মাথা লক্ষ্য করে বারি মারলে উক্ত বারি বাম হাত দিয়ে প্রতিহত করলে তার বাম হাতের কনুইয়ের নীচে পড়ে হাতের ২টি হাড় ভেঙ্গে যায়।
সাক্ষী শাহাদাত মিয়া মাটিতে পড়ে গেলে আসামী জোবায়েদ মিয়া প্রাণে শেষ করার জন্য তার বুকে লাথি মারলে বুকের ডান দিকে মারাত্মক ফাটা ও ভাঙ্গা জখম হয়। এজাহারকারী ও সাক্ষী শাহাদাত মিয়া-এর চিৎকারে এজাহারকারীর মাতা সাক্ষী আমিনা বেগম রক্ষার জন্য এগিয়ে আসলে আসামীগণ তার শরীরে এলোপাথারী কিল, লাথি, মুড়কর মেরে শক্তফুলা জখম করে এবং পরনের কাপড় চোপড় ছিড়ে শ্লীলতাহানী করেন।
এজাহারকারী, তার পিতা ও মাতা প্রাণ রক্ষার্থে গৃহে প্রবেশ করলে আসামীগণ গৃহে প্রবেশ করে এজাহারকারীর দুবাই প্রবাসী ভাই শাপলা মিয়া- এর পাঠানো নগদ ৫০,০০০/- টাকা আসামী জাহাঙ্গীর মিয়া তারা ভেঙ্গে চুরি করে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে সাক্ষীগণ ঘটনাস্থলে এসে বাধা দিলে আসামীগণ সবার সামনে এই ব্যাপারে বেশি বাড়াবাড়ি করলে প্রাণে হত্যা করে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। ঘটনার পর এজাহারকারী ও তার পিতা জখমী অবস্থায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে তাদের অবস্থা আশংকাজনক দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করেন।
আদালতের বিচারক ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হলে এ রায় প্রদান করেন।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী প্রণব চন্দ্র গোপ সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিজ্ঞ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেক আসামিদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা দিয়েছেন।
অভিযুক্ত আসামী- জাহাঙ্গীর মিয়া-এর বিরুদ্ধে আনীত দা দিয়ে এজাহারকারী ঝর্ণা বেগম-এর কপালে ছেদ মেরে জখম করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে The Penal Code, 1860 এর ৩২৩ ধারার অধীন অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্তক্রমে ০৬ (ছয়) মাসের সশ্রম কারাদন্ড ও ১,০০০/- (এক হাজার) টাকা অর্থদন্ড,
অনাদায়ে আরো ১৫ (পনেরো) দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং উক্ত আসামীর বিরুদ্ধে আনীত সুলফি দিয়ে সাক্ষী শাহাদাত মিয়া-এর বাম হাতের কনুইয়ে হাড় ভাঙ্গা জখম করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে The Penal Code, 1860 এর ৩২৫ ধারার অধীন অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্তক্রমে ০৫ (পাঁচ) বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা অর্থদন্ড,
অনাদায়ে আরো ০১ (এক) মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং অপর অভিযুক্ত আসামী জোবায়েদ মিয়া-এর বিরুদ্ধে আনীত সুলফি দিয়ে এজাহারকারী ঝর্ণা বেগম-এর ডান পায়ের পাতায় জখম করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে The Penal Code, 1860 এর ৩২৩ ধারার অধীন অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্তক্রমে ০৩ (তিন) মাসের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা
অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরো ০৭ (সাত) দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং উক্ত আসামীর বিরুদ্ধে আনীত সুলফি দিয়ে এজাহারকারী ঝর্ণা বেগম-এর বাম হাতের কব্জিতে জখম করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে The Penal Code, 1860 এর ৩২৩
ধারার অধীন অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্তক্রমে ০৬ (ছয়) মাসের সশ্রম কারাদন্ড ও ১,০০০/- (এক হাজার) টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরো ১৫ (পনেরো) দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।তিনি আরো ও জানান রায় ঘোষণা শেষে দন্ড প্রাপ্ত আসামীদেরকে সাজা পরোয়ানা মুলে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :