রোদের তাপ যেন কমছেই না। চারিদিকে বাতাসে ভ্যাপসা গরম। ফলে তৃষ্ণা যেন মেটেই না। আবহাওয়ার যখন এমন হাল, তখন দরকার প্রচুর পরিমাণে পানীয় পান করা। পানীয়টা যদি হয় কচি ডাব, তবে তো কথাই নেই। তৃষ্ণাও নিবারণ হবে, পুষ্টিও মিলবে।
ডাব বা নারিকেলের পানিতে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচটি জরুরি উপাদান রয়েছে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়াম রয়েছে। ডাবের পানিতে যেসব উপাদান রয়েছে তা প্রতিদিনের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে নানা প্রকার রোগ থেকে রক্ষা করে।
প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি এই পানীয়টি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্য গুণেও ভরপুর। ব্যায়াম কিংবা পরিশ্রমের পর এই পানীয়টি পান করলে শরীরের ইলেক্টোলাইটের ভারসাম্য ফিরে আসে। এতে থাকা পটাশিয়াম ও সোডিয়াম এই ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়া এতে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কপার এবং অ্যামিনো এসিড শরীর সুস্থ রাখতে দারুণ কার্যকরী। তাই আর দেরি না করে এই পানীয়র চমকে দেওয়া কিছু গুণের কথা জেনে নেওয়া জরুরি।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর
ডাবের পানি উপস্থিত ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মেডিকেল জানার্লে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে পটাশিয়াম শরীরে লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখার মধ্যে দিয়ে উচ্চ রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখে। তাই যাদের পরিবারে এই মারণ রোগটির ইতিহাস রয়েছে, তাদের নিয়মিত ডাবের পানি পান করা উচিত।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে
জার্নাল ফুড অ্যান্ড ফাংশন স্টাডিসে প্রকাশিত ডাবের পানিতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং ডায়াটারি ফাইবার ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, ডাবের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়, যা ইনসুলিনেরর কার্যকারিতা বাড়ায়। ফলে এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা ডাবের পানি পান করতে পারবেন।
শরীরে পানির ঘাটতি দূর করে
ডাবের পানি শরীরের অন্দরে প্রবেশ করা মাত্র পানির ঘাটতি মিটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে এতে উপস্থিত ইলেকট্রোলাইট কম্পোজিশান ডায়ারিয়া, বমি এবং অতিরিক্ত ঘামের পর শরীরে ভিতরে খনিজের ঘাটতি মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো গরমকালে ডাবকে রোজের সঙ্গী করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
শরীরের ওজন কমায়
ডাবের পানি উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি এনজাইম হজম ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মেটাবলিজমের উন্নতিতেও সাহায্য করে থাকে। ফলে খাবার খাওয়া মাত্র তা এত ভালোভাবে হজম হয়ে যায় যে শরীরের অন্দরে হজম না হওয়া খাবার মেদ হিসেবে জমার সুযোগই পায় না। ফলে ওজন কমতে শুরু করে। ডাবের পানি শরীরে লবণের মাত্রা ঠিক রাখে। ফলে ওয়াটার রিটেনশন বেড়ে গিয়ে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, থিয়ামিন এবং পাইরিডোক্সিনের মতো উপকারি উপদানে ভরপুর ডাবের পানি প্রতিদিন পান করলে শরীরের অন্দরের শক্তি এতটা বৃদ্ধি পায় যে জীবাণুরা কোনোভাবেই ক্ষতি করার সুযোগ পায় না। সেই সঙ্গে ডাবের পানিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ নানাবিধ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
হার্টের টনিক
শরীরে বাজে কোলেস্টেরল বা এল ডি এল-এর পরিমাণ কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ডাবের পানির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, দেহে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমাতেও ডাবের পানি বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
মাথার যন্ত্রণা দূরে থাকে
ডিহাইড্রেশনের কারণে মাথা যন্ত্রণা বা মাইগ্রেনর অ্যাটাক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে দ্রুত এক গ্লাস ডাবের পানি করে নিন। এমনটা করলে দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম, এই ধরনের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
শরীরের বয়স কি ধরে রাখতে চান? তাহলে আজ থেকেই ডাবের পানি খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন। আসলে ডাবের পানি রয়েছে সাইটোকিনিস নামে নামে একটি অ্যান্টি-এজিং উপাদান, যা শরীরের উপর বয়সের ছাপ পরতে দেয় না। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কিডনি ফাংশনের উন্নতি হয়
প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে ডাবের পানি কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত টক্সিন উপাদানদের ইউরিনের সঙ্গে বের করে দিয়ে নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়।
স্ট্রেস কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে ডাবের পানি উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরের প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন স্ট্রেস কমায়, তেমনি পেশীর সচলতা বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, ডাবের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁত এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এনার্জি ড্রিংকের চেয়ে ভালো
কঠোর অনুশীলন কিংবা পরিশ্রমের কারণে শরীর থেকে খনিজ-সমৃদ্ধ তরল বেরিয়ে যায়৷ সেটা পূরণে আমরা অনেকেই এনার্জি ড্রিংক পান করে থাকি৷ কিন্তু তা না করে এক গ্লাস নারকেল পানি খাওয়া বেশি ভালো৷ কারণ এতে বাজারে পাওয়া যাওয়া এনার্জি ড্রিংকের চেয়ে বেশি পটাশিয়াম ও চিনি রয়েছে৷
রক্তের প্লাজমার বিকল্প
জরুরি প্রয়োজনে রক্তের বিকল্প হিসেবে ডাবের পানি শরীরে প্রবেশ করানো যেতে পারে৷ কেননা রক্তের প্লাজমার গুণাগুণের সাথে এর মিল রয়েছে৷ সলোমন দ্বীপপুঞ্জের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইভি ফ্লুইডের অভাবে অসুস্থ এক রোগীর শরীরে ডাবের পানি প্রবেশ করিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়েছিল৷
ক্যানসার দূরে রাখে
ক্যানসার দূরে রাখে ডাবের পানি। নিয়মিত ডাব খেলে ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলন ক্যানসার ও অন্যানো আরো কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায় অনেকখানি।
অন্যসব পানীয়ের মতো ডাবের পানি পান করার উৎকৃষ্ট সময় নেই। দিনে যে কোনো সময় ডাবের তাজা পানি পান করলে ভালো বোধ করবেন আপনি। তবে সকালে খালি পেটে ডাবের পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য দ্বিগুণ ফল বয়ে আনে।
বাজারে ক্ষতিকর ড্রিংক ছেড়ে ডাবকে পানীয় হিসেবে বেছে নিতে পারেন। প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে অন্তত দু’গ্লাস ডাবের পানি পান করে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখুন।
সুত্রঃ ঢা/টা
ভিসি/এসকে
আপনার মতামত লিখুন :