সর্বশেষ :

পাট শাক খেলে হার্টঅ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে


অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময় : মে ৮, ২০২৪ । ৯:২৯ অপরাহ্ণ
পাট শাক খেলে হার্টঅ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে

প্রকৃতির মধ্যেই রয়েছে আমাদের সুস্বাস্থ্যের খাজানা। শুধু সেসব ভেষজ মহৌষধকে চিনে নিয়ে ডায়েটে সংযুক্ত করার দেরি। তাহলেই একাধিক রোগ থাকবে দূরে। জানলে অবাক হবেন, এমনই এক অত্যন্ত উপকারী প্রাকৃতিক উপাদান হলো পাট শাক।

পাটকে আমরা চিনি সোনালি আঁশ নামে। এর আঁশ দিয়ে অনেক পণ্য তৈরি হয়। তবে কচি পাটের পাতা ব্যবহার করা হয় খাবার হিসেবে। কেউ ভেজে খান কেউবা রান্না করেন ডাল দিয়ে। অনেকে আবার ভাবেন এর কোনো উপকারিতা নেই।

পাট একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম করচরাস কেপসুলারিস। বিশ্বের অনেক জায়গায় পাট উৎপাদিত হয়; তার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও চীন উল্লেখযোগ্য। পাট প্রধানত আঁশ উৎপাদনে চাষ করা হয়, যার কচি সুস্বাদু ও রসালো পাতা সবজি হিসেবেও খাদ্যে ব্যবহৃত হয়। তাই পাট আঁশ ও রান্না উভয়ই উদ্দেশ্যেই কাজে লাগে।

পাটজাতীয় উদ্ভিদগুলো খাদ্য ও ঔষধ হিসেবেও সমানভাবে কার্যকর, নিরাপদ, মাদকমুক্ত, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হীন। সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে সাধারণত উন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশেই এসমস্ত ঔষধি গাছের প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে। প্রসাধনী, সুগন্ধি ও রংয়ে ঔষধি উদ্ভিদের নির্যাস বিশেষ ভূমিকা আছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত।

দূষণ এবং জীবনযাত্রার বদ অভ্যাসের কারণে কোষের যে অক্সিডেটিভ ক্ষতি হয় তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাট শাক খেলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। খাওয়ার রুচি বাড়ায়!

বিজ্ঞানলব্ধ গবেষণা থেকে জানা যায় যে শুষ্কপাটের পাতা চায়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ফিলিপাইনে সাধারণত বাঁশের অঙ্কুর ও অলিটোরিয়াসের জাতের পাটের পাতা একসাথে মিশিয়ে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। অন্যদিকে উত্তর আফ্রিকায় ও মধ্যপ্রাচ্যে মালুখিয়া নামে পরিচিত কচি পাটপাতা সবুজ শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া পাটপাতা লেবানন,

ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্ডান এবং তিউনিসিয়ার রান্নাতেও ব্যবহৃত হয়। তুরস্ক এবং সাইপ্রাসে, পাটপাতা মোলোখিয়া নামে পরিচিত যা কি না মোলোচা হিসাবে এক ধরনের মুরগির স্টু রান্নাতে ব্যবহৃত হয়।

ফারাওদের সময় থেকে পাটপাতা একটি প্রধান মিসরীয় খাবার। জাপানে পাটের শুকনো পাতা কফি এবং চায়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইউরোপে স্যুপ তৈরিতে পাটের পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইউরোপে স্যুপ তৈরিতে পাটের পাতা ব্যবহার করা হয়।

প্রায় সারা বছরই আমাদের দেশে পাটশাক পাওয়া যায়। পাটের পাতা শুধু শাক হিসেবেই নয় বরং পাটের পাতায় রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ যেমন- প্রচুর পরিমাণ আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম,

ফসফরাস, ভিটামিন ই, কে,সি, বি-৬ ও নিয়াসিন। প্রতি ১০০ গ্রাম পাটপাতায় ক্যালরির পরিমাণ ৭৩ কিলোজুল, আমিষ ৩.৬ গ্রাম, লোহা ১১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯৮ মিলিগ্রাম ও ক্যারোটিন ৬৪০০ (আইইউ) আরো রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খাদ্যআঁশ।

পাট একটি সুপরিচিত বাস্ট ফাইবার উদ্ভিদ কিন্তু বৈজ্ঞানিক তথ্য অপ্রতুলতার জন্য ঔষধ হিসেবে খুবই কম পরিচিত। গাছের প্রতিটি অংশই ঔষধ হিসেবে কার্যকর। আয়ুর্বেদী শাস্ত্র মতে এই গাছের ভেষজ গুণকে অসাধারণ মূল্য দেয়া হয়। পাটগাছ, বিশেষ করে পাতা ও বীজ নৃতাত্ত্বিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

পাটপাতা শারীরিক অসুস্থতা যেমন- রেচক বা কোষ্টকাঠিন্য, মাথাব্যথা, চিকেনপক্স বা গুটিবসন্ত, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং গুঁড়াকৃমি চিকিৎসায় পাটগাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়। পাটপাতার জলীয় অথবা অ্যালকোহলিক নির্যাস,

যার মধ্যে পলিস্যাকারাইড ও অলিগোস্যাকারাইড জৈব পদার্থগুলো সমৃদ্ধ থাকে, মানব ত্বকের জন্য প্রসাধনী বা চুলের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাট পাতায় রয়েছে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মতো উপাদান। নিয়মিত পাট পাতা খেলে যে একাধিক প্রাণঘাতী রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। চলুন পাট শাকের নানা গুণ সম্পর্কে জেনে নিই-

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ পাটশাকে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম লবণ থাকায় রক্তসঞ্চালন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। এর জন্য উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা দূর হয়। তাছাড়া পাট বীজ থেকে কর্চোরি, কর্কোরজেনিন, ক্যাপসুলারিন, কর্কোরিটিন, অলিটোরিসাইড, কর্কোসুলারিন এবং কর্কোটক্সিন নামক বেশ কিছু জৈবযৌগ পাওয়া যায়।

আহরিত এই জৈবযৌগ কার্ডিওটোনিক ওষুধ হিসাবে কাজ করে। এটি সোডিয়াম-পটাশিয়াম এটিপিসকে বাধা দান করে কার্ডিয়াক পেশির সংকোচন শক্তির উপর কাজ করে। পাটশাক রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে থাকে এবং নিয়মিত পাটশাক খেলে হার্টঅ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল কার্যকারিতা পেট্রোলিয়াম ইথার দ্বারা প্রক্রিয়াজাত পাটশাকের নির্যাস, বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া যেমন- ই. কোলি স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস এবং ইয়ারসিনিয়া এন্টারোকোলিটিকা প্রভৃতি এর বিরুদ্ধে কাজ করে।

ইথাইল অ্যাসিটেট এবং পানি দ্বারা প্রক্রিয়াজাত পাটশাকের নির্যাস ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া যেমন- জিওট্রিকাম কনডিডাম এবং বোট্রিটিস সিনেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। পাটশাকের মিথানোলিক নির্যাস পাতার ব্যাকটেরিয়ারোধী ও ছত্রাকরোধী হিসেবে কাজ করে।

পাট শাক ক্যানসার প্রতিরোধ। বেশি করে গাছের পাতা ও ফল খেলে বিশেষত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এলাকায় ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস পায়। জাপানের গবেষকেরা পাটের পাতা থেকে দুটি অ্যান্টিটিউমার বর্ধিতকরণ যৌগ শনাক্ত করেছেন,

যা হলো ফাইটোল এবং মনো-গ্যালাক্টোসিলডিয়াসিলগ্লিসারল। গবেষণালব্ধ প্রমাণ থেকে পাওয়া যায় যে, গরম পানিতে সিদ্ধ পাট পাতার জুস অ্যান্টিটিউমার বর্ধিতকারী উপাদানের সক্রিয়তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং গরম জলে সিদ্ধ পাট পাতার জুস টিউমার বর্ধিতকারী রাসায়নিকের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কার্যকর।

ওজন কমবে তরতরিয়ে​। ওজনের কাঁটাকে নিম্নমুখী করতে চাইলে ডায়েট চার্টে পাট শাককে জায়গা করে দিতেই হবে। কারণ এতে মজুত থাকা পর্যাপ্ত ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুণেই ওজন কমবে। তাই কম সময়ের মধ্যে মেদ ঝরানোর ইচ্ছে থাকলে অবশ্যই পাট শাকের নানা সুস্বাদু পদ চেখে দেখুন।

​বাড়বে ইমিউনিটি​। ইমিউনিটি চাঙ্গা থাকলে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া শরীরে সিঁধ কাটার সুযোগ পাবে না। ফলে একাধিক সংক্রামক অসুখের ফাঁদ এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে। তাই বিশেষজ্ঞরা ইমিউনিটি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে পাট শাক। এই পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি এবং অত্যন্ত উপকারী কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে চাঙ্গা রাখে।

হাড়ের জোর বাড়াতে চান তো নাকি? উত্তর হ্যাঁ হলে আজ থেকেই পাতে পাট শাকের পদ রাখুন। তাহলেই দেখবেন আপনার হাড়ের জোর বাড়তে সময় লাগবে না।

এই পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এই দুই উপাদান কিন্তু হাড়ের ক্ষতি মেরামতির কাজে সিদ্ধহস্ত। অতএব অস্টিওপোরোসিসের মতো জটিল অসুখে ভুক্তভোগীদের ডায়েটে পাট শাক রাখতেই হবে।

​পাট শাক প্রদাহ কমানোর কাজে সিদ্ধহস্ত​। একাধিক ক্রনিক অসুখের পেছনে কলকাঠি নাড়ে প্রদাহ। তাই সুস্থ থাকতে যেনতেন প্রকারে ইনফ্লামেশন কমানোর চেষ্টা করতে হবে। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে পাট শাক।

এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ভাণ্ডার, যা কি না অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দূর করার কাজে সিদ্ধহস্ত। এই কারণেই কমে প্রদাহের বাড়বাড়ন্ত। তাই সুস্থ সবল জীবনযাপন করার ইচ্ছে থাকলে ডায়েটে পাট শাক রাখতেই হবে।

গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো পেটের সমস্যা কমানোর ইচ্ছে থাকলে আপনাকে পাতে রাখতেই হবে পাট শাক। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা কি না অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ানোর কাজে সিদ্ধহস্ত। অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়লে যে পেটের অসুখের ফাঁদ এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে, তা তো বলাই বাহুল্য!

 

সুত্রঃ ঢা/টা

পুরোনো সংখ্যা

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১