গাজর একপ্রকার মূল জাতীয় সবজি। বাংলাদেশে খুব কম মানুষই গাজর খায়। রান্নায় এর ব্যবহারও কম। বরং আমাদের রান্নায় আলু, লাউ, পটল, ভেন্ডি, করলা, ঝিঙে, বেগুন, কুমড়ার ব্যবহার বহুগুণ বেশি। সে তুলনায় গাজরের ব্যবহার নগণ্য। এখানেই মার খায় পুষ্টি।
পুষ্টিবিদদের মতে, গাজর হলো পুষ্টির ভাণ্ডার। এতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খনি। আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, লোহা ও ফাইবার। তাই এই সবজি নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ থাকে।
নিয়মিত গাজর খেলে গুরুতর রোগব্যাধি কাছে আসার সুযোগ পায় না। ক্যান্সারের আশঙ্কা কমায় এই সবজি। দূরে রাখে আরও অনেক রোগ। তাই প্রতিদিন এই সবজির পদ পাতে রাখার চেষ্টা করুন। চাইলে কাঁচা গাজর চিবিয়েও খেয়ে নিতে পারেন। এতে আরও বেশি উপকার!
তার আগে চলুন জেনে আসি গাজর কী কী রোগ থেকে দূরে রাখে-
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
শেষ কয়েক দশকে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের ভুলভ্রান্তিই মূলত এই অসুখের কারণ। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, গাজরে উপস্থিত থাকা কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে সক্ষম।
গাজরে রয়েছে ক্যারোটিনয়েডস ও অ্যান্থোসায়ানিন। এই দুটি উপাদান দেহে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি আটকে দেয়। তাই ক্যানসার প্রতিরোধ করতে চাইলে প্রতিদিন গাজর খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
চোখের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে চাইলে গাজর আপনাকে প্রতিদিনের ডায়েটে রাখতেই হবে। এতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন নামক এক প্রাকৃতিক উপাদান। এই উপাদান মানবশরীরে প্রবেশ করার পর ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়। ভিটামিন এ চোখ সুস্থ রাখতে সিদ্ধহস্ত।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন থাকলে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন আটকানো যায়। ফলে চোখে ছানি পড়ার আশঙ্কা কমে। এমনকি সূর্যের আলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চোখকে সুরক্ষিত রাখা যায়।
হার্ট থাকে সুস্থ-সবল
এখন মাত্র ৩০ বছর বয়স পেরোনোর পরই অনেকে হার্টের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি এই অসুখে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো রোগীর সংখ্যাও কয়েকগুণ বেড়েছে। তাই বয়স ৩০-এর গণ্ডি পেরোলেই নিয়মিত হার্টের চেকআপ করান। পাশাপাশি ডায়েট ও শরীরচর্চায় জোর দিন।
গবেষণায় দেখা গেছে, গাজরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিন্তু ব্লাড প্রেশার ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই পরোক্ষভাবে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের ছুটি
পেট পরিষ্কার না হলে সারাটা দিন খারাপ যায়। গ্যাস, পেট ফাঁপা ও অ্যাসিডিটির মতো জটিলতা লেগেই থাকে। এছাড়া মনের উপরও এই অসুখ প্রভাব বিস্তার করে। খোলা মনে বাঁচাই যায় না।
তবে ভালো খবর হলো, এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে গাজর। এতে রয়েছে ফাইবারের ভাণ্ডার। এই ফাইবার মল তৈরিতে এবং মল নরম করতে সাহায্য করে। তাই টয়লেট গেলেই সহজে পেট পরিষ্কার হয়ে যায়। মল নরম করার ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
ব্লাড সুগার থাকে হাতের মুঠোয়
বহুদিন ধরে সুগারে ভুগছেন? কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না রক্তে থাকা শর্করার পরিমাণ? ভয় নেই, এই সমস্যা সমাধানে আপনার হাতিয়ার হতে পারে গাজর।
এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। এই ফাইবার সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, গাজরে থাকা বিটা ক্যারোটিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে। তাই এই ভয়াল রোগে আক্রান্ত হতে না চাইলে ডায়েটে রাখুন গাজর।
সুত্রঃ দৈ/যু
ভিসি/এসকে
আপনার মতামত লিখুন :