সর্বশেষ :

তীব্র তাপপ্রবাহে বোরো ধানে হিটশকের শঙ্কা


দিনাজপুর,প্রতিনিধি;
প্রকাশের সময় : মে ৫, ২০২৪ । ৭:১২ অপরাহ্ণ
তীব্র তাপপ্রবাহে বোরো ধানে হিটশকের শঙ্কা

আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে কৃষিখাতে। ইতিমধ্যেই খরা, বন্যা, ঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে দেশে দাবদাহ শুরু হয়েছে।

দেশের উত্তরাঞ্চলে শুরু হয়েছে খরার প্রভাব। এই প্রভাব থেকে রক্ষা পায়নি দিনাজপুরের খানসামা উপজেলাও। এতে উপজেলার প্রধান ফসল বোরো ধান হিট ইনজুরি বা হিটশকের ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে কৃষকের চোঁখে মুখে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। বৃষ্টি না হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে।

এতে অনেক স্থানে বোরো জমিতে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সেচের অভাবে জমিতে বোরো ধানের ফলন নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত। এমন অবস্থা যদি সপ্তাহখানেক থাকে তাহলে বোরো ধানের মারাত্মক ক্ষতি হবে।

মাত্রাতিরিক্ত গরমে মানুষ যেমন হিটস্ট্রোক করে তেমনি তীব্র দাবদাহে ধানগাছও পুড়ে যায়, মরে যায়। যাকে বলা হয় হিটশক বা হিট ইনজুরি। হিটশক হলে ধানের ফুল পুড়ে দানা চিটা হয়ে যায়। মূলত ধানের ফুল ফোটার সময়ই এ ধরনের ক্ষতি হয়।বর্তমানে এ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের প্রধান ফসল বোরো।

রোববার (৫ মে) উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, তীব্র দাবদাহে পুড়ছে ধান ক্ষেত। আকাশ ফেটে যেন ঝরছে আগুন। তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। এই তপ্তরোদে নিয়মিত বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। সে কারণে সেচ পাম্পের মালিক ক্ষেতে পানিও দিতে পারছেন না। সেচের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে ধানক্ষেত।

ধানের ফুল আসার জন্য সর্বোচ্চ সহনীয় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও আবহাওয়া অফিস বলছে- দিনাজপুরে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ৪১ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ অবস্থায় ঝড় বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে শঙ্কা চাষিদের।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলায় ৩ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৬৯০ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ২৮১৬ হেক্টর। যা অর্জন হয়েছে ৩ হাজার। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৫৫০ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ২৯৫০ হেক্টর অর্জন হয়েছে।

জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর বলেন, ধানের অবস্থা খুব খারাপ। এতো পানি দিচ্ছি পানি তো থাকে না। রোদের তাপে কোনো খাল-বিলে পানি নেই। কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো কাজ হয় না। একটা জমিতে তিন চারবার স্প্রে করা লাগছে। এভাবে কৃষক বাঁচবে? জমির ধান বাঁচাইতে গেলে তো মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিতে হবে। তা ছাড়া তো উপায় নেই।

গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক আল আমিন বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে আমাদের। তার উপরে এই দাবদাহ। এবার আমন চাষে করে আমরা লাভবান হয়েছি। সেই আশায়  আবার বোরো আবাদ করেছি। খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।

রামকলা এলাকার বোরো চাষি গোপাল চন্দ্র জানান, বোরো ধান লাগাতে দিন-রাত পরিশ্রম করেছি। বোরো আবাদে খরচও বেশি হয়। এছাড়া এই তাপে আরো বেশি যন্ত্রণায় আছি। বিদ্যুৎ এর অবস্থা তো আরো নাজুক। বোরো ধান লাগানোর পর থেকে তিন-চার দিন পরপর সেচ দিতেও কুল পাচ্ছি না। লাভের আশায় বোরো আবাদ করেছি মনে হচ্ছে লোকসানে পড়ব।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা হাবিবা আক্তার বলেন, বর্তমানে তাপমাত্রা অনেক বেশি। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে জমিতে ২-৩ ইঞ্চি পানিতে রাখতে হয়। তাহলে ধানে হিটশকের ঝুঁকি থাকে না। এ বিষয়ে সার্বিক পরামর্শ দিতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।

ধান গবেষকরা বলেছেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি অথবা কমার ফলে এই দুই কারণেই হিটশক বা হিট ইনজুরি হয়। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে হিটশকের মাত্রা ধরা হয়। বর্তমানে দেশে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রী তাপমাত্রা বিরাজ করছে। বোরো মৌসুম শুরু হয় শীতে নভেম্বরের শেষে অর্থাৎ কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে।

আর শেষটা হয় চরম গরমের এপ্রিল-মে মাসে, অর্থাৎ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। ধানের জন্য ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রা অসহনীয়। ফুল ফোটার সময় এক-দুই ঘণ্টা এ তাপমাত্রা বিরাজ করলে মাত্রাতিরিক্ত চিটা হয়ে যায়।

এ দিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপপ্রবাহের মধ্যে কালবৈশাখীও থাকে। কিন্তু যখনই তাপপ্রবাহ হয় এবং সে সময় বৃষ্টি থাকে না, তখনই ধানের জন্য তা হিটশক ঘটে। অর্থাৎ, বৃষ্টিহীন তাপপ্রবাহের সময় ধানের ফুল এলে তা শুকিয়ে যায়। যে অবস্থা এখন বিরাজ করছে।

পুরোনো সংখ্যা

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১