সর্বশেষ :

কুড়িগ্রামে বিভিন্ন নদ নদী নদী নাব্যতা-সংকটে 


রুহুল আমিন রুকু,কুড়িগ্রাম:
প্রকাশের সময় : মে ৪, ২০২৪ । ৮:০৭ অপরাহ্ণ
কুড়িগ্রামে বিভিন্ন নদ নদী নদী নাব্যতা-সংকটে 
oppo_0
উজান থেকে আসা পলিতে ভরাট হয়ে গেছে একসময়ের খরস্রোতা ধরলা। নদীর বুকে এখন ধু ধু বালুচর। একই অবস্থা তিস্তা ও দুধকুমারেরও। সম্প্রতি কুড়িগ্রাম সদরে।
কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সব কটি প্রবহমান নদ-নদীর তলদেশে বছরের পর বছর পলি বাড়ছে। কমছে পানি ধারণের ক্ষমতা।
তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন, গত দুই দশকে এসব নদ-নদীর নাব্যতা-সংকটে বিঘ্নিত হচ্ছে নৌপরিবহনের ব্যবস্থা, আবার কোথাও কোথাও বেড়েছে ভাঙন। পানির ধারণক্ষমতা কমায় বর্ষা মৌসুমে তীরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় বন্যা। আর শুষ্ক মৌসুমে অনেক স্থানে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কৃষিতে সেচ দেওয়ার মতো অবস্থা থাকে না। মাছেরও দেখা মেলে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, জেলার ৯ উপজেলার ভেতর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা, তিস্তাসহ ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদী বয়ে গেছে। এসব নদ-নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩৬ কিলোমিটার।
জেলার রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। গত এক দশকে এই নদী সব দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উজানে ভারতের পক্ষ থেকে পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশ অংশে এই নদী স্বকীয়তা হারিয়েছে বলে জানান তিস্তা এলাকার বাসিন্দারা।
রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তিস্তাপারের কৃষক মিলন হোসেন জানান, ভাঙনে তিস্তা অঞ্চলের বাসিন্দারা এখন নিঃস্ব। ভরা মৌসুমে স্বল্প মেয়াদে পানিপূর্ণ থাকলেও তিস্তায় এখন নালার মতো পানির প্রবাহ। পানিসহ প্রশস্ততা ২০০ থেকে ২৫০ মিটার হবে। গভীরতা হবে সর্বোচ্চ ২০ ফুট। গোটা নদীজুড়ে চর জেগে উঠেছে। এসব চরের অনেক জায়গায় এখন বাদাম, ভুট্টা, মরিচ আর পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে।
মিলন বলেন, ‘তিস্তা এখন আর নদী নাই। তিস্তা এখন আবাদি জমির মতো। তিস্তাপাড়ে পানির লেয়ার নেমে যাচ্ছে। এ বছর নদীতীরবর্তী অনেক টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। সামনে আরও খারাপ দিন আসতেছে।’
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদ অববাহিকার চর ভগবতীপুর গ্রামের বাসিন্দা তারাচাঁদ শেখ বলেন, ‘আগের নদী আর নাই। আগে নদীতে থাও (ঠাঁই) পাওয়া যাইত না। অহন ১৫-২০ হাত পানি। বালু জইমা জইমা ভরাট হইয়া গেছে। চর আর চর।’
চরের এই বাসিন্দা বলেন, ‘নদী খনন কইরা যদি শাখাগুলা এক করে দিত, তাহলে গভীরতা বাড়ত।’
ব্রহ্মপুত্রে দল বেঁধে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন আলম, মাহবুব ও দেলোয়ার। উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের এই মৎস্যজীবীরা জানান, গত দুই দশকে ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর আগের মতো মাছ মেলে না।
তিস্তাপারের উপজেলা রাজারহাটের বাসিন্দা ও রিভারাইন পিপলের পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘জেলার সব নদী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনে নদীগুলোর প্রস্থ বেড়েছে। দীর্ঘদিন পলি জমে গভীরতা কমেছে। কিন্তু পলি সরানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় নাই।’
তিস্তার বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে এই নদী গবেষক বলেন, ‘২০১৪ সালের আগপর্যন্ত তিস্তায় পানি আসত। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে তিস্তা এখন পানি পাচ্ছে না। ২-৩ কিলোমিটার প্রস্থের তিস্তা এখন ভাঙনে কোথাও কোথাও ১০-১২ কিলোমিটার হয়েছে। কিন্তু পানি নেই। অথচ ভরা বর্ষায় তিস্তা ছিল ২ কিলোমিটার আর শুষ্ক মৌসুমে ছিল ১ কিলোমিটার।’
নদী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ড. তুহিন আরও বলেন, ‘২০১৭ সালের বন্যায় ধরলায় বৃহৎ পরিসরে পলি পড়েছে। কিন্তু পলি সরানো হয়নি। ধরলায় পানির প্রবাহ সামান্য। উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ধরলার পানিও প্রত্যাহারের পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। দুধকুমার নদে ড্রেজিংয়ের নামে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই বেশি উপকৃত হচ্ছেন। ব্রহ্মপুত্রে পানিপ্রবাহ থাকলেও আগের মতো নেই। পলি আর ভাঙনে এটিও ভরাট হয়েছে, প্রস্থে বেড়েছে।’
সংকট উত্তরণে তিস্তা ইস্যুতে পানি দাবি, সব নদ-নদীর সীমানা চিহ্নিত করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে খনন এবং অববাহিকাকেন্দ্রিক নদী পরিচর্যার ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি এই শিক্ষক ও গবেষকের।
পলি জমে জেলার নদ-নদী ভরাট হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও পাউবো বলছে, তারা শুধু নদীর ভাঙন রোধে কাজ করছে। নদীর নাব্যতা কিংবা প্রবাহ ঠিক রাখার কাজটি করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ‘ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ ঠিক করতে পারলে তীরে পানির চাপ পড়ে না। ফলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়। ধরলা ও দুধকুমার নদে বিআইডব্লিউটিএ খননকাজ করছে। নদী দুটির নাব্যতা ও প্রবাহ ফেরানোর অগ্রগতি সম্পর্কে তারাই ভালো বলতে পারবেন।’ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয় বলে জানান এই পানি প্রকৌশলী।

পুরোনো সংখ্যা

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১