বোরোধান কাটা শুরু করছেন সাগরদিঘী’র আদর্শ কৃষক সাবান আলী

বোরোধান কাটা শুরু করছেন সাগরদিঘী’র আদর্শ কৃষক সাবান আলী
টাঙ্গাইল,প্রতিনিধি:
প্রকাশের সময় :

৩৮°/ ৪০°  ডিগ্রি তাপমাত্রায় বোরোধান কাটা শুরু করছেন কৃষক। তীব্র ধাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। তবুও থেমে নেই কৃষক। দুমুঠু পেট ভরে ভাত খাওয়ার জন্য পারে না এমন কাজ নেই বাংলার সাধারণ জনগণের সামনে। কৃষক সব পারেন। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৃষক সবসময়ই মাঠে থাকেন।

তীব্র গরম আর রোদের তাপ। সারা দেশ জ্বলছে। এসবের কিছুই মনে নেই কৃষক সাবান আলীর। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের একজন আদর্শ কৃষক সাবান আলী। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে কৃষি তার নেশা। জমিতে ধান পেকেছে। রোদ আর গরম অথবা তাপ এসব তার কাছে কিছুই না। মুখে মুচকি হাসি।

ধান কাটতে হবে। গরুর জন্য খড় শুকাতে হবে।এসবের চিন্তা মাথায় রেখে মাঠে নেমেছে ধান কাটতে। স্বরজমিনে সাক্ষাতে ভোরের চেতনা পত্রিকার টাঙ্গাইল জেলার বিশেষ প্রতিনিধি কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন সামনের ১৫ টা দিন যদি এমন রোদ থাকে তবে

আরামে ধান কাটতে পারব ও শুকাতে পারবো এবং গরুর জন্য খড় শুকাতে পারবো। যদি বৃষ্টি আসে তবে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। মানুষের জন্য চাল বাজারে কিনতে পাওয়া যায় কিন্তু খড়ের বিষয়টা মেটানো যায় না। তাই রোদ খুবই দরকার।

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে দেখা যায় কৃষি নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম চালক। কৃষি থেকেই নাকি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হয়।যা সাধারণত ১১.১  শতাংশ হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিথেন গ্যাস পরিবেশ দূষণে একটি বড় উদ্বেগের কারণ। কেননা এটি কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ২৬ গুণ বেশি শক্তিশালী।

গবাদি পশু পালন ও ধান উৎপাদন থেকে প্রচুর পরিমাণে মিথেন নির্গত হয়। বিশ্বব্যাপী মিথেন নির্গমনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গবাদি পশু থেকে আসে। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে,

গরুর মাংস ভক্ষণ ছেড়ে দিতে পারলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন রোধে সাহায্য করবে। আরো বলা হচ্ছে, কৃষি খাত থেকে গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। যার পরিমাণ প্রায় ৭ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে ধারণ করা যায় বিজ্ঞান তার তথ্য দিয়ে সুনির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যেই চলতে বলবেন। কিন্তু বাংলার সাধারণ কৃষক সবকিছুই বোঝেন এবং শোনেন।

কিন্তু পেট যে কোন প্রকার নিয়ম মানে না। সেই কারণেই সাবান আলীর মতো একজন আদর্শ কৃষক এই তীব্র তাপদাহকে উপেক্ষা করে ধান পেকেছে কাটতে হবে এই খুশিতে মাঠে নেমেছেন।

মুচকি হাসছেন। ঘরে নতুন ধান আসবে। নতুন ধানের সুঘ্রাণ সম্পূর্ণ আলাদা। তা কৃষক সাবান আলী খুব ভালো বোঝেন। ইতিমধ্যে সরকার বাহাদুর কৃষকের কাছ থেকে ৩২ টাকা কেজিতে ধান ক্রয় করবেন এই ঘোষণা দিয়েছেন।

কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ধানের কেজি ২০-২৫ টাকার মধ্যে। সার, কীটনাশক, সেচ ব্যবস্থার মূল্য বেশি থাকার কারণে উৎপাদন মূল্য সরকার নির্ধারিত মূল্যের চাইতেও অনেক বেশি পড়েছে।

আর এদিকে প্রতি কাঠা জমি কাটতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে কৃষককে গুনতে হচ্ছে ৭০০/৮০০ টাকা। ধান মাড়াই করতে গিয়ে কৃষককে দিতে হচ্ছে কাঠা প্রতি ৩০০ টাকা। তাই শাবান আলীর দাবি সরকার যদি সাধারণ কৃষকের কথা চিন্তা করে সার,বিষ,সেচের মূল্য কমিয়ে দেন তবেই কৃষকের স্বস্তি ফিরবে।

সাবান আলী আরো বলেন এক পাখী(৫৬ শতক) জমিতে আমার খরচ হয়েছে ৪২ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ধান পাব ৩৫ থেকে ৩৮ মন। তাহলে আপনি দেখেন আমার বেশি হইল না কম হইলো। সরকার যদি কৃষকের কথা চিন্তা করেন ভাবেন তবে অবশ্যই ধানের মূল্য অন্তত পক্ষে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা কেজিতে ধান কিনবেন।

তা না হলে আমাদের অনেক টাকা ক্ষতি হয়ে যাবে।লোকসান গুনতে হবে আমাদের। আর বারবার লোকসান হলে আমরা কৃষক অবশ্যই ধান আবাদ করতে পারবোনা। আপনাকে ধন্যবাদ আর আপনার পত্রিকা ভোরের চেতনাকে ধন্যবাদ। সাদা মনের কৃষক এভাবেই তাদের সহজ সরল জীবন যাপন করে থাকেন।