সর্বশেষ :

দশমিনায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ বানিজ্য সিমাহীন, লাগাম ধরবে কে


ফয়েজ আহমেদ, দশমিনা:
প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৩, ২০২৪ । ৬:২৯ অপরাহ্ণ
দশমিনায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ বানিজ্য সিমাহীন, লাগাম ধরবে কে

আমি এবং আমার অফিস দুর্নীনিত মুক্ত। এমন লেখা ব্যানার সাটানো পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে।

কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ নেয়ার চিত্র দেখা যায়। জানা যায় উপজেলায় ১৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যার চলোমান দায়িত্বে আছেন শিক্ষা কর্মকর্তা সহ তিনজন।

ক্লাস্টার ভাগ করে বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তাগন । বিভিন্ন সময় উজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামান এর বিরুদ্ধে আছে ঘুষ বানিজ্য ও অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ। শিক্ষা কর্মকর্তার এই ঘুষ বানিজ্যের সাথে জড়িত আছেন কতিপয় শিক্ষক প্রতিনিধিরাও।

মোসাঃ ফাতিমা বেগম এবং মোঃ ইমাম হোসেন নামক দুই সহকারী শিক্ষকই ২০১৪ সাল থেকে ছিলেন ১৪০ নং উত্তর চরহাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্মরত। যার মধ্যে একজন বর্তামানে ১৩২ নং সৈয়দ জাফর পলোয়ান বাড়ী স্কুলে কর্মরত।

তাহারা দুইজনই এক সাথে এরিয়া লাভ করেন প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা। যেখান থেকে ঐ শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সাবেক কর্মকর্তাকে দিতে হয়েছে এককালীন ৮ লক্ষ টাকা।

মোসাঃ সাবিকুন্নাহার ,সহকারি শিক্ষিকা ৭১নং পূর্ব আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেডিকেল ছুটি নিয়ে প্রতিমাসে নিয়মিত হাজিরা, বেতন ভাতা উত্তোলন, মাসিক রির্টাং এ স্বাক্ষর পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। তার বিনিময়ে ঐ শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিতে হয় উৎকোচ।

উক্ত ঘুষ লেনদেনের সময় ধারন করা ভিডিও এ প্রতিনিধির কাছে সংরক্ষিত থাকলেও সাংবাদিকরা বিষয়টি আচ করতে পেরেছে মর্মে ঐ শিক্ষিকাকে অফিসে ডেকে এনে তার অনাপত্তিমুলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

এবিষয় জানতে চাইলে ঐ শিক্ষা কর্মকর্তা নানান তালবাহানার আশ্রয় নিয়ে আজ কাল বলে ঘুরাইতে থাকেন বরং তথ্য না দিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে বিষয়টি দামাচাপা দেয়ার জন্য একধিক চাপ প্রেয়োগ করেন।

এ তালিকায় আরো রয়েছেন উপজেলার,১৩১ নং মধ্য আরজবেগী সিকদারিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রাহিমা বেগম। তার নিকট থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিবেন মর্মে মোটা অংকের অর্থ গ্রহন,

একই বিদ্যালের সাবেক প্রধান শিক্ষকের একটি থেকে স্পেশাল বরাদ্ধ আড়াই লাখ টাকার মধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকাই দিতে হয়েছে অফিস খরচ ও কর্তা ব্যাক্তিদের। ৮৯নং আদমপুর বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন এর সহকারি শিক্ষিকা তামান্না জাহান,

১৪৪ নং রচহাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জিন্নাত হোসেন, ১০৫ নং মীরমদন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা বিবি হাজেরা ১৪০ নং উত্তর চরহাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ সাইফুল ইসলামসহ অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা।

যাহারা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে মেডিকেল ছুটি নিয়ে নিয়মিত হাজিরা খাতায় সহি করন, বেতন ভাতা উত্তোলন, মাসিক রির্টাং এ স্বাক্ষর ও জমা দেন। এদিকে তামান্না বেগম পাচঁ মাসের বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন যাহার সিংহভাগ অর্থই দিতে হয়েছে ঐ শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামান এবং প্রধান শিক্ষককে ।

শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিলে সবই সম্ভব বলে দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক। তারা বলেন একজন শিক্ষক- শিক্ষিকা মেডিকেল ছুটি নিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, বেতন ভাতা উত্তোলন, মাসিক রির্টাং এ হাজিরা থাকে কি করে ? সাধারন শিক্ষকদের দাবী এ গুলো সবই হয় টাকার বিনিময়ে।

যাহা সম্পূর্ন অবৈধ। অভিযোগ রয়েছে ছোট খাটো কোন বিষয় নিয়েই প্রায় ৩০০ শতাধিক শিক্ষককে সোকজ করেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা। অতপর মাত্র ৫০০০হাজার টাকা দিলেই রহিত করা হয় সোকজ। ছাড়াও কতিপয় শিক্ষক-শিক্ষিকাকে মৌখিক আদেশের মাধ্যমে ও টাকার বিনিময়ে ছুটি দেন এবং এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে ক্লাশ করার অনুমতি দিয়ে থাকেন।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে ৭১ নং পূর্ব আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা সাবিকুরন্নাহার বেগমকে তাহার মুঠোফোনে ফোন দিলে এবং ঘুষ দিয়ে ছুটি নেয়ার বিষয় জানতে চাইলে ফোন কেটে দেয় পরবর্তীতে আকাধিক বার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেনি। অন্যন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাগন প্রাথমিক ভাবে ফোন রিসিভ করে পরিচয় পাওয়ার পর আর কথা বলেনি।

বলার কথাও নয়। কারন,দশমিনা উপজেলার এই ১৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষকই ঐ কর্মকর্তার কাছে জিম্মি। কোন মতে মুখ খুললেই নেমে আসতে পারে মানসিক ও আর্থিক নির্যাতনের খড়গ।

তাই প্রকৃত সত্য যাছাই কল্পে সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার প্রতিটি বিদ্যালয়ে গেলে, বিদ্যালয়ে ঐ সকল শিক্ষক শিক্ষিকাদের পাওয়া যায়নি। প্রধান শিক্ষকদের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমার কাছে কোন তথ্য নেই শিক্ষা অফিসার স্যার জানেন তিনিই বলতে পারবেন।

পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান জানান, দশমিনা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ বা কোন দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকলে তার প্রমান পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

অতপর পুনরায় ঐ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামান এর কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি অফিসে যেতে বলেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে বিষয়টি ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রকাশ থাকেযে, ছবিটি ভিডিও থেকে ধারন করা।

এছাড়াও বিদ্যালয় উন্নয়ন কল্পে বরাদ্ধকৃত অর্থ যেমন – স্লীপ,ক্ষুদ্র মেরামত,প্রাক-প্রাথমিকসহ সকল প্রকার বরাদ্ধ থেকেই ঐ কর্মকর্তাকে দিতে হয় কমিশন। স্লীপ এর আওতায় প্রতিটি বিদ্যালয়কে দেয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। অপর দিকে যে সমস্ত বিদ্যালয়ে ২০০+ ছাত্র-ছাত্রী সে সকল বিদ্যালয়ে স্লীপ পাবে ৭০ হাজার টাকা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে বরদ্ধ পাওয়া ১৪৫ টি বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি থেকে আগাম ঐ শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিতে হয়েছে ১৫০০ টাকা অর্থাৎ এককালীন প্রায় দুই লাখ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ ডিসেম্বার চলে গেলেও ৫০% টাকা এখনও রয়েছে ঐ শিক্ষা কর্মকর্তার পকেটে। ক্ষুদ্র মেরামত থেকেও বড় একটি কমিশন দিতে হয় তাহাকে।

এছাড়াও উপজেলার চরাঞ্চলের ১৩ টি বিদ্যালয়ের কোন বিদ্যালয়ে স্নিপের কোন কাজ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে,কোন কোন বিদ্যালয় থেকে স্নিপের সম্পুর্ন টাকাই আত্মসাৎ করেন শিক্ষা কর্মকর্তা। সঠিক তদন্ত করলে এর প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হবে বলে দাবী ভুক্তভোগী শিক্ষক মহলের।

পুরোনো সংখ্যা

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০