ঝিনাইদহের সোসিও ইকোনমিক হেলথ এডুকেশন অর্গানাইজেশন (সিও) এনজিও এখন চাকরিজীবীদের জন্য এক আতঙ্কের নাম। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে জমিজমা বিক্রি করে জামানত,
প্রশিক্ষণ খরচ ও ব্লাঙ্ক চেক দিয়ে নানা হয়রানির শিকার হয়ে যখন কেউ চাকরি ছাড়ছে তখনি তার ওপর নেমে আসছে মামলার খড়গ। এরপরও ভুক্তভোগীরা প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করে পড়েছেন আরেক বিপদে।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দেওয়া এমন ৫ কর্মীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে সিও। বিভিন্ন অখ্যাত পত্রিকায় তাদের বিরুদ্ধে ছাপানো হচ্ছে সংবাদ। উপায়ান্তর না দেখে ভুক্তভোগীরা ঢাকাস্থ এমআরএ ভবনের সামনে মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে সিওর বিষয়ে কালবেলাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার কর্মীরা ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক, এনজিও ব্যুরো, সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ পাঠাতে শুরু করেছেন। অনুসন্ধানে বেরিযে আসছে এনজিও সিওর বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের তথ্য।
দাবি উঠেছে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা বিভাগ তদন্ত করলে- আয়কর ফাঁকি, রশিদ ছাড়া অর্থ আদায়, প্রভিডিয়েন্ট ফান্ডের টাকা পরিশোধ না করা, কর্মীদের জামানতের টাকা ফেরত না দেওয়া, প্রশিক্ষণের নামে টাকা নেওয়া, সদস্যদের কাছ থেকে রশিদবিহীন এককালীন টাকা নেওয়া,
ঋণ বিতরণের সময় রশিদ বিহীন টাকা নেওয়া, ঋণ বিতরণকারীদের মধ্যে দ্বিগুণ মূল্যে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প কিনতে বাধ্য করা,
সরকারি প্রতিষ্ঠান না হয়েও প্রতিদিন সিওর প্রধান কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা, শ্রম আইন লঙ্ঘন করে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো নিয়োগপত্রে শর্ত আরোপ করা, নিয়োগের সময় চাকরিপ্রার্থীর ৩টি ব্ল্যাঙ্ক চেক ও জামিনদারের ২টি ব্ল্যাঙ্ক চেক,
ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে বাধ্যতামূলক স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া, চাকরিকালীন কর্মীর নিকট আত্মীয়ের অসুখ দেখিয়ে ঋণ পাস করে নিজেদের ঘাটতি মেটানোসহ চাকরি ছাড়লে আর্থিক অনিয়মের মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা দেওয়া এবং প্রধান কার্যালয়ে ডেকে উপপরিচালক মো. অহিদুল আলমের নেতৃত্বে পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা মিলবে।
এ ছাড়াও মিলেছে আরও তথ্য। খুলনার আমিন গোলদার ২০২৩ সালে ১৬ জুলাই সিনিয়র শাখা ব্যবস্থাপক পদে সিওর বেনাপোল শাখায় যোগদান করেন। সিওর সহকারী নির্বাহী পরিচালক মো. তোফাজ্জেল হোসেন স্বাক্ষরিত সিও ২০টি শর্তে আমিন গোলদারকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়।
নিয়োগের দিন আমিন গোলদারকে ৩৫ হাজার টাকা জামানত ও ৫৫০০ টাকা প্রশিক্ষণ ফি বাবদ হিসাব রক্ষক বরাবর জমা দিতে বলা হয়। আমিন গোলদারের ৩৫ হাজার টাকার রশিদ রিসিভ করেন প্রধান হিসাব রক্ষক বদরুল আমিন। কিন্তু প্রশিক্ষণ বাবদ নেওয়া ৫৫০০ টাকার কোনো রশিদ প্রদান করা হয়নি।
এ মাসের ৩১ তারিখে চাকরিতে স্তফা দেন আমিন গোলদার। এখন তার জামানতের টাকা, জমা রাখা তার নিজের ৩টি ও তার খালাতো ভাইয়ের দুটি ব্ল্যাঙ্ক চেক ফেরত দিচ্ছে না সিও।
আবার ১৫ দিনের বেতন বাবদ তাকে দেওয়া ১৬৪০০ টাকাও ফেরত চাচ্ছে সিও। শনিবার দুপুরে সিও প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে আমিন গোলদার এগুলো ফেরত চাইলে প্রধান হিসাব রক্ষক বদরুল আলম এসব জানান। এ ঘটনার একটি ভিডিও সংবাদকর্মীদের হাতে রয়েছে।
অন্যদিকে সিওর চাকরির শর্তগুলো দেশের ও আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের খেলাপ বলেই শ্রম আইনের বিজ্ঞ আইনজীবীরা জানিয়েছেন। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দেওয়া এ বি এম মাহবুবুর রশিদ,
সাবিনা ইয়াসমিন, আমিরুল ইসলাম, আজিজুল আলম মাছুদা পারভীনকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান এবং অর্থআত্মসাৎকারী হিসেবে ছবির সঙ্গে ক্যাপশন দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করানো হয়েছে।
আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে কাউকে অর্থআত্মসাৎকারী হিসেবে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশে তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়ে ভুক্তভোগীরা বলেন, আমরা সবাই সিও এনজিও কর্তৃক মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের শিকার।
সিও এনজিও কর্তৃক বিভিন্ন আদালতে যতগুলো মামলা রয়েছে সেই মামলায় সিওর দাবি করা অর্থের হিসেব যোগ করলে আড়াইশ কোটি টাকার উপরে হয়। এত টাকা আত্মসাৎ করলে সেই প্রতিষ্ঠান টিকে আছে কীভাবে?
তারা বলেন, সিওর বেশিরভাগ কর্মী প্রভিডিয়েন্ট ফান্ডের টাকা পায় না। টাকা পাওনা হলেই উল্টো তার নামে জোটে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ। চাকরি ছাড়ার দুই বছর পরেও মামলা করা হয়েছে এমন রেকর্ডও আছে।
তারা আরও বলেন, আমারদের জমা রাখা ব্ল্যাঙ্ক চেক ও ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের লেখা পরবর্তীতে টেম্পারিং করে মিথ্যা মামলা দেয়। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন, সমাজসেবা, এনজিও ব্যুরোসহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করলেই তাদের অত্যাচারের আরও কাহিনি বের হয়ে আসবে।
এসব বিষয়ে সিওর উপপরিচালক মো. অহিদুল আলমকে মোবাইল ফোনে কোনো প্রশ্ন করার আগেই তিনি সংবাদকর্মীদের বলেন, আপনারা মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করছেন। উত্তরে তাকে- মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হলে আপনার বা আপনাদের বক্তব্য তাদের নিয়ে প্রকাশিত পত্রিকা কেন পাঠানো হয়নি।
আপনারা শ্রম আইনের খেলাপ করছেন, কর্মী নির্যাতন করছেন, আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন, প্রভিডিয়েন্ট ফান্ডের টাকা পরিশোধ করেন না -এ সংবাদ প্রকাশ করেছে পত্রিকাগুলো। এগুলো মিথ্যা হলে আপনারা আইনের আশ্রয় নেন। এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।এদিকে জানা গেছে, সিও এনজিওর অনিয়ম তদন্তে কয়েকটি সংস্থা মাঠে নেমেছে।
ভিসি/এসকে
আপনার মতামত লিখুন :