সর্বশেষ :

নাটোর জেলায় এই প্রথম সাতজন নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা


শরিফুল ইসলাম, নাটোর (সদর) ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি
প্রকাশের সময় : মার্চ ১৫, ২০২৩ । ৬:১১ অপরাহ্ণ
নাটোর জেলায় এই প্রথম সাতজন নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

নাটোরে উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীর দায়িত্ব পালনে স্থানীয়দের প্রশংসা অর্জন করেছে। নির্বাহী কর্মকর্তা পদে তারা প্রত্যেকেই যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। অসহায় গরিব মানুষের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন এ সকল ইউ এনও । অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাৎক্ষণিক, নিয়মিত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন সহ স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময়,বিশেষ করে ভাবমূর্তি সব মহলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে।সাত নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন নাটোর সদর উপজেলায় সারমিনা সাত্তার, নলডাঙ্গায় রোজিনা আক্তার, বাগাতিপাড়ায় নীলুফা সরকার, লালপুরে শামীমা সুলতানা, বড়াইগ্রামে মারিয়াম খাতুন, গুরুদাসপুরে শ্রাবণী রায় এবং সিংড়ায় মাহমুদা খাতুন।

নাটোরের নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিনা সাত্তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে তিনি বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছেন। তিনি বলেন,জনসেবার জন্যই যে জনপ্রশাসন, এই সত্য প্রতিষ্ঠিত কারতে চাই। আমি নারী বা পুরুষ, এটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার কাজ আমাকে গন্তব্যে নিয়ে যাবে।

নলডাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার জানান যে গত বছর নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছেন। রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি মেনে মায়া–মমতা দিয়ে স্থানীয় জনগণের মন জয় সম্ভব।

বাগাতিপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা সরকার বলেন মা–বাবার পাশাপাশি আমার নিজেরও ইচ্ছা ছিল প্রশাসনে চাকরি করব। কর্মজীবনে সেটাই হয়েছে। তিনি আর বলেন, ‘আমার কাছে “নারী কর্মকর্তা” শব্দটাই একটা ইতিবাচক শক্তিশালী সম্ভাষণ মনে হয়।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা সুলতানা তিনি বলেন নিজের কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ।

বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়াম খাতুন জানান যে ২০২১ সালে বড়াইগ্রাম উপজেলার ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় বলেন যে আমি নাটোরের পাশের জেলা পাবনার মেয়ে ।সরকারি সেবাগুলো জনগণের দারগোড়ায় পৌঁছানোর ব্রত নিয়ে জনবান্ধব জনপ্রশাসন গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি।

সিংড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা,মাহমুদা খাতুন তিনি বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামাতে স্নাতকোত্তর করেছেন লোকপ্রশাসনে। অর্পিত দায়িত্ব মায়া-মমতা দিয়ে পালন করার অসাধারণ সাধ্য রয়েছে নারী কর্মকর্তার।

দেশের শাসনব্যবস্থায় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮২ সালের আগ পর্যন্ত এই ক্যাডারে নারীর সুযোগ ছিল না। সুযোগ পেয়ে মেধাসহ সার্বিক যোগ্যতা দিয়ে সেই চিত্র আমূল বদলে দিয়েছেন নারী কর্মকর্তারা। তারই উদাহরণ নাটোর জেলার সবগুলো উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী নির্বাহী কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য যে, নাটোরে সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীলিমা জাহান,নিম্ন আদালতের বিচারক এমনকি পৌরসভার মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা।

গত ডিসেম্বরে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন মাহমুদা শারমিন। তিনি জেলার প্রথম নারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তিনি বর্তমানে সদর সার্কেলের দায়িত্বে রয়েছেন।

জেলার সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রোজি আরা বেগম। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করছেন বিসিএস ৩১ ব্যাচের রওনক জাহান।

জেলার নিম্ন আদালতের বিচারকার্যেও সরব ভূমিকায় রয়েছেন নারীরা। আদালতের ১৭ জন বিচারকের মধ্যে ৭ জন নারী বিচারক। এদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার বিচারক, লিগ্যাল এইড অফিসার, সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। এই চিত্র স্থানীয় নারীদেরও অনুপ্রাণিত করছে।

বর্তমানে দেশের ছয়টি পৌরসভার মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। এদের মধ্যে নাটোরের দুই পৌরসভার মেয়র নারী। তারা হলেন নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি এবং লালপুরের গোপালপুর পৌরসভার মেয়র রোখসানা মোর্ত্তোজা লিলি। অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে চাপ সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও জনসেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত এই পদ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের বলে মনে করেন এই দুই মেয়র।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন বলেন, ‘যে কোনো চাকরির চেয়ে পুলিশে চাকরি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। আর তা যদি নারীর ক্ষেত্রে হয় তবে মাত্রাটা আরো বেশি। তবে এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন সেটা মুখ্য বিষয়। এখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। নারীরা যদি নিজেকে প্রথাগত চিন্তা-মননের জায়গা থেকে বের না করে তবে উত্তরণটা কঠিন।’

জেলা সিভিল সার্জন রোজি আরা বেগম বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ এখনো তুলনামূলক কম। তবে নেতৃত্বগুণ থাকলে নারী সব সহকর্মীদের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে। অনুকূল কর্মপরিবেশ পেলে নারীর অগ্রযাত্রা আরো অপ্রতিরোধ্য হবে।’

নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিত্বে নারী তখনই সফল হবে যখন জনগণ তার পাশে থাকে। অবশ্যই রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু নাগরিকদের সহযোগিতা পেলে কাজ করা সহজ হয়। আমি বরাবরই পৌরসভা পরিচালনায় নাগরিকদের অব্যাহত সহযোগিতা পেয়েছি। সাহস নিয়ে এগিয়ে এলে নারীদের পক্ষে সব ক্ষেত্রেই দারুন ভূমিকা রাখা সম্ভব।’

নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ তিনি বলেন,এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলে মনে করেন । একজন নারী কর্মকর্তা একজন পুরুষ কর্মকর্তার সঙ্গে সমানতালে বা কখনো আরো বেশি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। তবে স্বাধীনতা–পরবর্তী দেশের শাসনব্যবস্থায়ও নারীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো।

পুরোনো সংখ্যা

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
সতর্কবাণী: এই সাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ এবং কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।