রিয়াজুল ইসলাম, নাটোর প্রতিনিধিঃ
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বিলুপ্ত হতে চলেছে প্রকৃতির সৌন্দর্যবর্ধনকারী শিমুল (তুলা) গাছ। বসন্ত এলেই প্রকৃতিপ্রেমীদের আকৃষ্ট করে থাকে শিমুল ফুল। অন্য গাছের তুলনায় শিমুল গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় বহু দূর থেকে এ গাছটির মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। কবি ও সাহিত্যিক দের কল্পনা জগতকেও আলোড়িত করে এই শিমুল গাছের সৌন্দর্য। গাছটি কেবল সৌন্দর্যই বিলায় না, শিমুল গাছে রয়েছে নানা অর্থকরী ও ঔষধি গুণ।
প্রাকৃতিক ভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজগুণ। আর্য়ুবেদিক চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে।
জানা যায়, শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘বোমাবাক্স সাইবা লিন’। এটা বোমাবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তকার হয়। রোপণের ৬-৭ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। গাছটি ৮০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে শিমুল গাছ দেড়শ’ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের শেষের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে বাতাসের সাথে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়। অন্যান্য গাছের মতো এ গাছ কেউ শখ করে লাগায় না। প্রাকৃতিক ভাবেই এ গাছ বেড়ে ওঠে।
এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদি পশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। অথচ বর্তমান সময়ে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে অকারণে কেটে ফেরছে। অতীতে ব্যাপক হারে নির্মাণ কাজ, টুথপিকসহ নানা ধরনের প্যাকিং বাক্সে ও দিয়াশালাই তৈরি এবং ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। ফলে আজ বিলুপ্তির পথে। উপজেলার পারকুঠী (গালিমপুর) গ্রামের ১২১ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নূর মুহাম্মদ সরকার জানান, আগে গ্রামে গ্রামে অনেক শিমুল গাছ ছিল। এ শিমুল ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষ যৌন সমস্যা,বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠকাঠিনা নিরাময়ে এ গাছের মূল ব্যবহার করত।
শিমুল গাছের চারা চাষ করে অত্র উপজেলাতে অনেকেই স্বাবলম্বি হয়েছেন। এমনি একজন চাষি ও বাগাতিপাড়া প্রতিবন্ধি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, আমরা চৈত্র মাসে শিমুল গাছের তুলা সংগ্রহের পরে, বৈশাখ মাসের শেষের দিকে এর বিচি গুলো আমাদের জমিতে রোপন করি। মাস খানিকের মধ্যেই শিমুল চারা গাছ হয়। এই চারা গাছের মুল দেশের বিভিন্নি প্রান্ত থেকে ব্যাপারিরা এসে ৫/৬ টাকা পিচ মূল্যে নিয়ে যায়।
উপজেলার মালঞ্চী বাজারের তুলা ব্যবসায়ী মুবারক বিশ্বাস বলেন, একটি বড় ধরনের শিমুল গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আগের তুলনায় এখন শিমুলের তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। অথচ এখনও এ গাছ প্রতিনিয়ত নিধন হচ্ছে ।
উপজেলা বন বিভাগের ফরেস্টার জাহেদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আওতায় অন্যান্য গাছের সঙ্গে শিমুল গাছের চারাও রোপণ করতে হবে। এ গাছ রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা না নিলে এক সময় উপকারী গাছের তালিকা থেকে এ গাছটি হারিয়ে যাবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়তো জানতেও পারবে না বাংলাদেশে শিমুল নামের কোন গাছ ছিল।এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মমরেজ আলী বলেন, শিমুল গাছ পরিবেশের সৌন্দর্য বর্ধনকারী এবং উপকারী এ গাছ রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব।
আপনার মতামত লিখুন :