কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে শুক্রবার দুপুরের জোয়ারের সঙ্গে ভেসে আসা মরা তিমিটি একইদিন দিবাগত রাত ১টার দিকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। গবেষণার জন্য হাড় ও অন্য প্রত্যঙ্গ সংগ্রহের আশায় মাটিচাপা দেয়া স্থানটি সংরক্ষণ করছে সমুদ্র ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, শুক্রবারের মরা তিমির দেহ মাটিচাপা দেয়ার ৫ ঘণ্টার মাথায় আরো একটি মরা তিমির দেহাবশেষ বালিয়াড়িতে উঠে এসেছে। হিমছড়ি সৈকতের শুক্রবারের সেই স্থান হতে প্রায় ৫শ’ মিটার দক্ষিণে ক্ষুদ্রকায় তিমির মরদেহ জোয়ারের পানিতে এসে ভাটায় বালিতে আটকে গেছে। ২৫-৩০ ফুট লম্বা এ তিমিটিও অর্ধগলিত এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।
তিনি জানান, শুক্রবার ভেসে আসা মৃত তিমির দেহাবশেষ সৈকতের বালিয়াড়িতে বিশাল গর্ত করে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। জোয়ারের পানিতে আবার ভেসে যাওয়া থেকে দেহটি আটকাতে বন বিভাগ শতাধিক শ্রমিক দিয়ে প্রচেষ্টা চালায়। এ সময় প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মী এবং উৎসুক জনতাও এতে সামিল হয়। কিন্তু সন্ধ্যা নামার পর উৎসুক জনতা ও অন্যান্য বিভাগের কর্মীরা ফিরে গেলেও বনবিভাগ, রামু উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করেন। ভেটেনারি সার্জনরা ময়নাতদন্তের পর স্কেবেটরের সাহায্যে গর্ত করে বনবিভাগের লাগানো শতাধিক শ্রমিকের সহযোগিতায় মৃত দেহটি মাটিচাপা দেয়া হয়। রাত ১টার দিকে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্টরা বাসায় ফিরতে ২টা বেজে যায়।
এ কর্মকর্তা আরো জানান, শনিবার ভোর ৭টার দিকে একই সৈকতের ভিন্ন পয়েন্টে আরো একটি মৃত তিমির দেহাবশেষ বালিয়াড়িতে উঠে এসেছে। জোয়ার নেমে যাওয়ার পর এটি বালিতে আটকে আছে। শুক্রবারের তিমির চেয়ে এটি সাইজে ছোট। এটি ক্ষতবিক্ষত, অর্ধগলিত। ধারণা করা হচ্ছে, এটিও আগে মরে ভাসতে ভাসতে ঢেউয়ের তোড়ে তীরে উঠে এসেছে। দুর্গন্ধ বেশি ছড়ানোর আগেই গতকালের মতো এটিও মাটিচাপা দেয়ার উদ্যোগ চলছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পিএইচডি ফেলো মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, শুক্রবার তীরে উঠে আসা মরা প্রাণিটি ব্রাইড হুয়েল এবং এটি প্রাপ্ত বয়স্ক। নীল তিমি গ্রুপের একটি প্রজাতি হলো ব্রাইড হুয়েল। এটি আমাদের বঙ্গোপসাগরের বাসিন্দা। তিমি সাধারণত দলবেধে চলে। কোনো কারণে দলছুট হলে অনেক সময় তিমি মারা যায়। এটা এবং আজকেরটার (শনিবারে তীরে আসা) ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে এবং এসব তিমি আরো অন্তত ১০-১২দিন আগে মারা গেছে বলে ধারণা বিজ্ঞানী আশরাফের। কিন্তু তিমির মৃত্যুর সঠিক কারণ অজানা।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, মাটিচাপা দেয়া তিমির দেহাবশেষের প্রয়োজনীয় অংশ সমুদ্র ও মৎস্য বিজ্ঞানীদের পরামর্শে শিক্ষা ও গবেষণার কাজে ব্যবহারের লক্ষ্যে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাংস পঁচে গেলে হাড়গুলো তুলে যেন সংরক্ষণ করা যায় সেই লক্ষ্যে মাটিচাপা দেয়া অংশটি ঘিরে রাখা হয়েছে। শনিবার ভেসে আসা তিমির দেহাবশেষও একই পদ্ধতিতে মাটিচাপা দেয়ার উদ্যোগ চলছে।
সুত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ
আপনার মতামত লিখুন :