এম.আমিরুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে থেকে সকলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্দাবিদ যশোর-৫ মনিরামপুর আসনের বার বার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী ও হুইপ মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। বুধবার ভোর ৫ টা ১০ মিনিটে ঢাকায় শেখ রাসেল গ্যাষ্ট্রোলিভার ইনষ্টিটিউট হাসপাতালের আইসিইউতে(ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি ইন্তিকাল করেন(ইন্নালিল্লাহী—–রাজেউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, চার মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি উপজেলার বিজয়রামপুর গ্রামে বিশিষ্ট আলেম পরিবারে ১৯৫২ সালের ১ নভেম্বর জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মুহাম্মদ ইসমাইল।মায়ের নাম নুর জাহান বেগম। পিতা-মাতা দুজনেই ইতিপূর্বে ইন্তিকাল করেছেন।
মনিরামপুরে নিজের প্রতিষ্ঠিত জামেয়া ইমদাদীয়া মাদানীনগর মাদ্রাসা মাঠে বুধবার সন্ধ্যায়(বাদমাগরিব) হাজার হাজার মুসল্লিদের অংশগ্রহনে জানাজা নামাজ অনুষ্টিত হয়। পরে মাদ্রাসার জামে মসজিদের সামনে তাকে দাফন করা হয়। এরআগে ঢাকা থেকে তার মরদেহবাহী ফ্রিজিং এ্যাম্বুলেন্স মনিরামপুরে আসলে শেষবারের মত দেখার জন্য ধর্মপ্রান মুসল্লিসহ হাজারো মানুষের উপচেপড়া ভীড় হয়। এসময় সেখানে স্বজনসহ হাজারো ভক্তদের আর্তনাদে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি, জামেয়া ইমদাদীয়া মাদানীনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি ওয়াক্কাস অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে ভর্তি করা হয় যশোরের ইবনে সিনা গায়গনষ্টিক সেন্টারে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২২ মার্চ বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা শেষে করোনা সনাক্ত হয়। ফলে ২৩ মার্চ বিকেলে মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে শেখ রাসেল গ্যাষ্ট্রোলিভার ইনষ্টিটিউট হাসপাতালের আইসিইউতে(ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) ভর্তি করা হয়। সেই থেকে তিনি আইসিইউতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার ভোর ৫ টা ১০ মিনিটে মুফতি ওয়াক্কাস ইন্তিকাল করেন।
এ দিকে তার মৃত্যুর খবরে মনিরামপুরে দলিয় নেতাকর্মী সমর্থক স্বজন সহ সর্ব স্তরের মানুষের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের মরদেহ দেখে শেষ শ্রদ্ধা এবং বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পৌর মেয়র অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুছা, উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন, যশোর সিটি প্লাজার চেয়ারম্যান এসএম ইয়াকুব আলী, অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি রেজাউল করিম, উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি ইবাদুল ইসলাম মনু প্রমুখ।
নিজের প্রতিষ্ঠিত জামেয়া ইমদাদীয়া মাদানীনগর মাদ্রাসায় বুধবার সন্ধ্যায় জানাজা নামাজ শেষে মাদ্রাসার জামে মসজিদের সামনে চিরনিদ্রায় শায়িত হন(দাফন করা হয়) প্রখ্যাত আলেম মুফতি ওয়াক্কাস। হাজার হাজার মুসল্লিদের অংশগ্রহনে জানাজা নামাজে ইমামতি করেন মুফতি ওয়াক্কাসের বড় ছেলে মুফতি সোয়াইব আহম্মদ। বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস ১৯৮৬, ১৯৮৮ সালে জাতীয়পার্টি এবং ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধিন চারদলিয় জোটের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৬ সালে জাতীয়পার্টি সরকারের ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের হুইপ ছিলেন। তার হাতেই মনিরামপুর পাইলট এবং বালিকা বিদ্যালয় জাতীয়করন হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এমপিওভূক্ত হয় দূর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বালিয়াডাঙ্গা খানপুর কলেজসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধিন চারদলিয় জোটের অন্যতম নেতা ছিলেন।
তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি এবং কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের সিনিয়র সহসভাপতি, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমিরেরও দায়িত্ব পালন করেন। তার নামে সরকার নাশকতাসহ অন্তত: ২৫ টি মামলা করেন। প্রখ্যাত এ আলেমের মৃত্যুতে মনিরামপুরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তিনি রাজনীতি করলেও কখনও ভিন্নমতালম্বিদের অবজ্ঞা করেননি।যশোর-৫ মনিরামপুর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করে ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০০১ সালে মোট তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুফতি ওয়াক্কাস।এছাড়াও চারদলিয় জোটের প্রার্থী হয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দিতা করেন ২০০৮ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে।
আপনার মতামত লিখুন :