মোঃ জনি পারভেজ, গুরুদাসপুর প্রতিনিধিঃ
উপজেলাজুড়েই ছোট বড় অসংখ্য লিচু বাগান। গাছের নিচে সারি সারি মৌমাছির বাক্স। লিচু ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা ফিরছে বাক্সে। বাক্স থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে মধু। এমনদৃশ্য নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার সর্বত্র। গুরুদাসপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসেদরের লিচু চাষে সফলতার গল্পের সাথে যুক্ত হয়েছে মৌসুমি মৌচাষিদের তৎপরতা। কর্মমুখি উদ্যোগ,প্রচেষ্টা,ধৈর্য্য ও একাগ্রতার সঙ্গে মৌ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার শতাধিক যুবক। এদেরই একজন সফল মৌচাষি মোশারফ হোসেন। গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়-গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে মোশারফ হোসেন।
৩ সন্তানসহ ৫ সদস্যের কৃষি শ্রমিক মোশারফের সংসারে এক সময় অভাব ছিলো নিত্য সঙ্গী। ২০০৩ সালে তাঁর এলাকার লিচু বাগানে সিরাজগঞ্জের এক মৌচাষী মৌবাক্স নিয়ে মধু চাষে আসেন। তাকে দেখে অনুপ্রানীত হয়ে শুরু করেন মৌচাষ। সে থেকে কেবলই সামনে এগিয়ে চলা,পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। আজ তিনি উপজেলার সফল মৌ খামারী। তার সফলতায় এলাকার বেলাল হোসেন,খয়বর হোসেনসহ অন্তত ৩০জন শিক্ষিত যুবকের অনুসরনীয় ব্যাক্তি মোশারফ হোসেন। মোশারফ হোসেন জানান, ২০০৩ সালে ২০ টি মৌমাছির বাক্স নিয়ে তাঁর পথচলা শুরু।
বর্তমানে তাঁর মৌ বাক্রের সংখ্যা শতাধিক।মৌচাষ ঘুরে বেড়ান সিরাজগঞ্জ,মাদারীপুর,দিনাজপুর,রাজবাড়িসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। অঞ্চল ভিক্তিক কালোজিরা,ধনিয়া,কুল,শরিষা ও লিচু ফুল কেন্দ্রিক মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করতেই তাঁর ছুটেচলা। মোশারফ হোসেন জানান,প্রতিটি বাক্সে ৮ থেকে ১০টি মৌচাক থাকে। প্রত্যেক চাকে বিশেষ কৌশালে একাধিক রানী মৌমাছি রাখতে হয়। বাক্স,চাক,রানীমাছিসহ একটি বাক্সের সাকুল্য খরচ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। প্রতি বাক্সে সপ্তাহে মধু সংগৃহীত হয় ৩ কেজি মধু।
সংগৃহীত মধু খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা হলেও পাইকারি দাম ২০০-২৫০ টাকা। দেশীয় বেসরকারী প্রতিষ্টান এপি,ডাবরসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্টান তাদের কাছ থেকে পাইকারী মধু সংগ্রহ করে থাকেন। কৃষি সম্প্রসারন অফিসে সরকার প্রদত্ত মৌবাক্সগুলো প্রকৃত চাষিদের মাঝে বন্টনের অনুরোধ জানান। মোশারফ হোসেন বলেন মৌচাষ মৌসুমী ব্যবসা। বছরের অগ্রাহায়ন মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত মধু সংগ্রহের মুখ্য সময়। বাঁকি সময়গুলোতে চিনি দিয়ে স্যুপ তৈরী করে মাছিদের খাবার যোগান দিতে হয়। মৌমাছি তাঁর সন্তানের মতো। মৌচাষে খরচ বাদে তার মাসিক গড় আয় ১৫ হাজার টাকা। এ আয়ে সন্তুষ্ট তিনি। মোশারফের মৌ-খামার দেখভালের জন্য মাসিক ১০ হাজার টাকা পারিশ্রমিকে রয়েছে ৩ জন শ্রমিক। শ্রমিক আব্দুর রশিদ(৩০) জানান,মধু সংগ্রগের কাজ করতে তাঁর ভালো লাগে। একাজের আয় দিয়ে চলে তাঁর সংসার।
নাটোর জেলা মৌচাষী এসোসিয়েশনের সভাপতি সুবল কুমার দাম জানান,-‘মধু বিক্রিতে সরকারিভাবে দাম নির্ধারণের দাবী তাঁর। ব্যাংকগুলোতে নুন্যতম সুদে ঋনের সুবিধা দিতে সরকারকে অনুরোধ করেন তিনি।’
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকতা হারুনর রশিদ জানান, মৌচাষিদের তাঁর দপ্তর থেকে প্রশিক্ষনসহ সবধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। উপজেলাজুড়ে ৪১০ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার ১০০ টি মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এ বছর মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ মে.টন। মৌচাষে মধু সংগ্রহের পাশাপাশি ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে ফল ও ফসলের উৎপাদন ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :